হোল্ডিং ট্যাক্স বা গৃহকর পরিশোধে করদাতাদের অনীহা দীর্ঘদিনের। তার ওপর রয়েছে অনিয়ম ও ভোগান্তির নানা অভিযোগ। এসব অভিযোগ থেকে মুক্তি দিতে এখন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে জোর দিয়েছে। ফলে কমেছে নাগরিক ভোগান্তি। অন্যদিকে, বেড়েছে রাজস্ব আয়।
খোদ সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ নিয়ে আগে নিয়মিত হয়রানির শিকার হতেন গ্রাহকেরা। কিন্তু বর্তমানে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স অনলাইনে করার মাধ্যমে সেই ভোগান্তি অনেকাংশে কমেছে।
অন্যদিকে, অনলাইন পেমেন্ট নিয়েও কিছু কিছু ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন গ্রাহকেরা। তারা বলছেন, আগের ম্যানুয়াল পদ্ধতির চেয়ে অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যের। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সময় মতো পেমেন্ট আপডেট দেখায় না।
কেন দিতে হয় হোল্ডিং ট্যাক্স
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে অঞ্চলের কাঠামোগত যেমন- আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা ও শিল্পের ধরন এবং প্রধান সড়কে (গলির ৩০০ ফুটের ভেতরে বাড়ি বা ৩০০ ফুটের বাইরে) বাড়ি ইত্যাদি মূল্যায়নের মাধ্যমে কর ধার্য করা হয়। কর্পোরেশনের মূল্যায়নের অঙ্কের ওপর ১২ শতাংশ হারে বার্ষিক কর ধার্য করা হয়। এর মধ্যে ৭ শতাংশ হোল্ডিং কর, ২ শতাংশ পরিচ্ছন্নতা কর এবং ৩ শতাংশ বাতি বা লাইটের কর।
হোল্ডিং ট্যাক্স হচ্ছে এক ধরনের কর যা স্থানীয় সরকারকে প্রদান করা হয়। ঢাকায় এটি দুই সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে আদায় করা হয়। মূলত হোল্ডিং ট্যাক্স হলো ঘরবাড়ির ওপর নির্ধারিত একটি মূল্য যা বার্ষিক কর হিসেবে নিজ এলাকার কর্পোরেশনকে প্রদান করতে হয়। এটি এলাকার মৌলিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পয়োনিষ্কাশন, আলো ও অন্যান্য রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয়। হোল্ডিং ট্যাক্স রাজস্ব আয়ের একটি বড় উৎস। হোল্ডিং ট্যাক্সের হার বাড়ি বা ভবনের অবস্থান, আকার, ধরন, মালিকের বয়স, পেশা এবং বিভিন্ন ব্যক্তির জন্য ভিন্ন হতে পারে।
জমি ও ইমারতের (বাড়িসহ) বার্ষিক মূল্যের ওপর হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য করা হয়। সিটি কর্পোরেশন এই কর আরোপ ও আদায়ের বিষয়টি পরিচালনা করে থাকে যা সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
হোল্ডিং ট্যাক্স নম্বর
হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হলে প্রথমে থাকতে হবে একটি হোল্ডিং ট্যাক্স নম্বর। প্রত্যেকটা বাসাবাড়িতেই নম্বর প্লেটে একটা নম্বর উল্লেখ করা থাকে। এটিই হচ্ছে হোল্ডিং নম্বর। যখন ট্যাক্স দিতে যাবেন তখন অবশ্যই এই হোল্ডিং নম্বরটি উল্লেখ করতে হয়।
হোল্ডিং নম্বর না থাকলে সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক অফিসে গিয়ে হোল্ডিং নম্বরের জন্য আবেদন করতে হয়। সিটি কর্পোরেশনে নির্দিষ্ট ফি প্রদান করার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা প্রদান করা হয়।
এই আবেদনের জন্য আবেদনপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, বাসাবাড়ির মালিকানার দলিল এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভূমির খাজনা রশিদ প্রয়োজন হতে পারে। এ ছাড়া রাজউকের ক্ষেত্রে রাজউক অফিসের নামজারিপত্র লাগবে।
হোল্ডিং ট্যাক্সের হিসেব যেভাবে
শহরে বাসাবাড়ির প্রতি বর্গফুটের জন্য ৬.৫০ টাকা হারে কর প্রদান করতে হয়। কর্পোরেশনের মূল্যায়নের অঙ্কের ওপর ১২ শতাংশ হারে বার্ষিক কর ধার্য করা হয়। এর মধ্যে ৭ শতাংশ হোল্ডিং কর, ২ শতাংশ পরিচ্ছন্নতা কর এবং ৩ শতাংশ বাতি বা লাইটের কর। শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে হোল্ডিং ট্যাক্স সাধারণত ফুট আকারে হিসেব করা হয়। সাধারণত প্রতি বর্গফুটের জন্য ৬.৫০ টাকা হারে হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান করতে হয়।
ঢাকা শহরে কারও ৫০০ বর্গফুটের বাড়ি থাকলে তার (৫০০ x ৬.৫০)= ৩২৫০ টাকা মাসিক কর আসে। এখানে সরকারকে ১০ মাসের হিসেবে এক বছরের ট্যাক্স দেওয়া হয়। তাহলে সেই ব্যক্তিকে (৩২৫০ x ১০)= ৩২৫০০ টাকা কর প্রদান করতে হবে। সাধারণত পুরো বছরে তিন মাস পরপর মোট চারবারে এই ট্যাক্স দেওয়া হয় বলে প্রতি তিন মাসে তাকে (৩২৫০০/৪)= ৮১২৫ টাকা সরকারকে দিতে হয়। তবে, যদি কেউ নিজ ফ্ল্যাটে শুধুই বসবাসরত থাকেন, সেখানে ভাড়া বা অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় একেবারেই না থাকে তবে হিসেব করা ট্যাক্স থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যায়।
এন পি/
Discussion about this post