আগামী সপ্তাহের মধ্যে নিজ নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্য চার নির্বাচন কমিশনার। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যেও তাদের পদত্যাগ করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দুইজন কমিশনার সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে চান বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল একটি সূত্র।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সাথে সাক্ষাৎ করতে সময় চান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে সময়ও দেওয়া হয় সিইসিকে। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে কোনো কিছু না জানিয়েই সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনারদের সাক্ষাতের সময় বাতিল করা হয়। এরপরই সিইসি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বিপ্লব ও ফরমান: সরকার ও সংবিধান’ নামক নিবন্ধন লেখেন। সিইসি ওই নিবন্ধনে উল্লেখ করেন, ‘আলোচনার জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না’। তার মানে করণীয় ঠিক করতে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ না পেয়েই সিইসি ওই নিবন্ধন লেখেন বলে জানায় নির্ভরশীল সূত্র।
সূত্র আরও জানায়, সিইসি, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান ও মো. আনিছুর রহমান পদত্যাগ করতে চান। কিন্তু নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর ও বেগম রাশেদা সুলতানা সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে চান।
এছাড়া বিভিন্ন সূত্র বলছে, গত রোববার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চার নির্বাচন কমিশনারকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতিকে টেলিফোন করলে তিনি এ পরামর্শ দেন। সিইসিকে রাষ্ট্রপতি পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, মানসম্মান নিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে চলে যান।
কাজী হাবিবুল আউয়াল ও নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমানকে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পাওয়া সিইসি ও অন্য চার নির্বাচন কমিশনারের ব্যাপারে তীব্র আপত্তি ছিল বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর। তাদের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর ৩ দফায় নির্বাচন কমিশনারদের মেয়াদকাল সম্পর্কে বলা হয়েছে, এই সংবিধানের বিধানাবলী-সাপেক্ষে কোনো নির্বাচন কমিশনারের পদের মেয়াদ তার কার্যভার গ্রহণের তারিখ হতে পাঁচ বছর হয়ে থাকে। সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের অপসারণ সম্পর্কে একই (১১৮) অনুচ্ছেদের দফা ৫-এ বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হতে পারেন, সেইরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত কোনো নির্বাচন কমিশনার অপসারিত হবেন না।
নির্বাচন কমিশনারদের পদত্যাগ সম্পর্কে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর দফা (৬)-এ বলা হয়েছে, ‘কোনো নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন। এর আগে ১৯৯০, ১৯৯৬ এবং ২০০৬ সালে আন্দোলন-অস্থিরতার মধ্যে সরকার পরিবর্তনের পর প্রথমেই নির্বাচন কমিশনারদের পদত্যাগ করতে হয়েছিল।’
এ ইউ/
Discussion about this post