যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন—ইসরাইল ও ইরানের চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়াবে কি না। হোয়াইট হাউস এক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে আলোচনার একটি বাস্তবসম্মত সম্ভাবনা সামনে রয়েছে। আলোচনার অগ্রগতি হবে কি না, তা বিবেচনায় রেখে আমি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব, যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে প্রবেশ করবে কি না।’
এর আগে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি এই সংঘাতে জড়ায়, তাহলে গোটা অঞ্চলে নরক নেমে আসবে। এটা আমেরিকার যুদ্ধ নয়।’
এই মন্তব্য এসেছে এমন এক সময়ে, যখন একদিন আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তিনি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে অংশ নেবে কি না।
‘ট্রাম্পপন্থি সাধারণ আমেরিকানদের জন্য বার্তা কী?—এমন প্রশ্নের জবাবে লেভিট বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর আস্থা রাখুন।’
তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে—ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে।
হোয়াইট হাউস এখনো কোনো ধরনের ‘অনুমাননির্ভর পরিস্থিতি’ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। যেমন, ইরানি কর্মকর্তারা হোয়াইট হাউসে আসতে পারেন কি না কিংবা যুদ্ধের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের অনুমোদন নেওয়া হবে কি না—এসব প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন লেভিট।
ট্রাম্প প্রশাসন এখন পর্যন্ত ‘কৌশলগত অনিশ্চয়তার’ কৌশল বজায় রেখেছে—তারা তাদের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ কিংবা ভাবনা খোলাসা করছে না।
বুধবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমি হয়তো করব, হয়তো করব না।’’
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি—ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির যতটা কাছাকাছি কখনো আসেনি, এখন ঠিক ততটাই কাছে।
তবে গোয়েন্দা সংস্থার মূল্যায়ন, বিশেষ করে কংগ্রেসে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক টুলসি গ্যাবার্ডের দেওয়া তথ্য ট্রাম্প নাকচ করে দিয়েছেন। গ্যাবার্ড বলেছিলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করছে না।
বুধবার জল্পনা আরও বেড়ে যায়, যখন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ট্রাম্পের আত্মসমর্পণের দাবি প্রত্যাখ্যান করেন।
বিবিসির অংশীদার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস জানায়, ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নেননি।
একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ট্রাম্প এখনই হামলা করছেন না, কারণ তিনি চান ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগ করুক।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ এক প্রতিক্রিয়ায় লেখেন, ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল আমার ইরান সংক্রান্ত ভাবনার বিষয়ে কিছুই জানে না।’ তবে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে তিনি কিছু বলেননি।
জানা গেছে, ট্রাম্প ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার কথা ভাবছেন। এটি একটি পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত গোপন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। ফোর্দো এতটাই সুরক্ষিত যে, শুধু যুক্তরাষ্ট্রের মজুত বড় বিস্ফোরক বোমাই এটি ধ্বংস করতে সক্ষম।
ইরান দাবি করেছে, ফোর্দো কেবল বেসামরিক কাজে ব্যবহৃত হয়।
এদিকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার সুইজারল্যান্ডে ইউরোপীয় দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন।
লেভিট জানান, মার্কিন মধ্যস্থতাকারী স্টিভ উইটকফ ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির মধ্যে বেশ কয়েকবার ফোনালাপ হয়েছে—যার মাধ্যমে সংকট নিরসনে কূটনৈতিক পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
ইরানের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী খতিবজাদে বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা এখনো আলোচনাকে প্রথম বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করছি, কিন্তু যতক্ষণ বোমাবর্ষণ চলবে, আলোচনার কোনো পরিবেশ থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র জড়ালে পুরো অঞ্চল জাহান্নামে পরিণত হবে, সংঘাত একটি ‘কাদায়’ পরিণত হবে, আগ্রাসন চলবে এবং নিষ্ঠুরতা বন্ধ হওয়ার পথ আরও দীর্ঘ হবে।’
‘এটি আমেরিকার যুদ্ধ নয়,’ মন্তব্য করে খতিবজাদে বলেন, ‘যদি ট্রাম্প এতে জড়ান, ইতিহাসে তিনি এমন একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে চিহ্নিত হবেন, যিনি এমন এক যুদ্ধে প্রবেশ করেছিলেন, যা তার ছিল না।’
ট্রাম্পের এই দুই সপ্তাহের সময়সীমার ঘোষণা এসেছে বৃহস্পতিবার সকালে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দক্ষিণ ইসরাইলের একটি হাসপাতালে আঘাতের পর।
ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, তাদের লক্ষ্য ছিল হাসপাতালের পাশে থাকা একটি সামরিক ঘাঁটি, হাসপাতাল নয়।
ইসরাইলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বেয়ার শেভার সোরোকা মেডিকেল সেন্টারে হামলায় ৭১ জন আহত হয়েছেন।
ইসরাইল জানিয়েছে, এই সংঘাত শুরুর পর দেশটিতে কমপক্ষে ২৪ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সর্বশেষ গত ১৫ জুন জানায়, ইরানে নিহতের সংখ্যা ২২৪ জন।
তবে ওয়াশিংটনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস নিউজ এজেন্সি জানায়, শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা ৬৩৯ জন।
বৃহস্পতিবারও ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে। তারা জানিয়েছে, রাতভর হামলায় আরাকের একটি ‘নিষ্ক্রিয় পারমাণবিক চুল্লি’ ও আবারও নাতানজের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
এম এইচ/
Discussion about this post