চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী ও তার ছেলে সোহানুর রহমান সিয়ামসহ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিসিএস পরীক্ষাসহ ৩০টির বেশি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের পেছনে এই সিন্ডিকেটের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই কেলেঙ্কারির ঘটনায় সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি সিন্ডিকেটের তথ্য সামনে এসেছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর বাড়ি মাদারীপুরের দাসার উপজেলার বটলা গ্রামে। স্থানীয়ভাবে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হলেও আবেদ আলীর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের খবর এলাকাবাসীকে হতবাক করেছে।
বটলা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, দরিদ্র পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় আবেদ আলী আট বছর বয়সে ঢাকার সদরঘাটে কুলির কাজ শুরু করেন। পরে তিনি গাড়ি চালানো শেখার পর পিএসসিতে একটি চাকরি পান। আর এর মাধ্যমে জড়িয়ে পড়েন প্রশ্নফাঁস চক্রে। গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়।
সম্প্রতি আবেদ আলী ডাসার উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার জন্য জনসংযোগ শুরু করেন। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দান করতেও দেখা যায় তাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হক (৪৫) ইউএনবিকে বলেন, “সৈয়দ আবেদ আলী দান-খয়রাতের জন্য বেশ পরিচিত। গত ঈদে তার ছেলে সিয়াম একটি বিলাসবহুল গাড়িতে করে এলাকার বাসাবাড়িতে গরুর মাংস বিতরণ করেন। তাদের এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণা ছিল না। সুষ্ঠু তদন্তের পর ন্যায়বিচার হওয়া উচিত।”
আবেদ আলী: প্রশ্নফাঁস করে যে টাকা কামিয়েছি সব আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছিআবেদ আলী: প্রশ্নফাঁস করে যে টাকা কামিয়েছি সব আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছি
আবেদ আলী কোটি কোটি টাকা খরচ করে নিজ গ্রামে বানিয়েছেন বিলাসবহুল বাড়ি। তিনি গবাদি পশুর খামার ও বাজার প্রতিষ্ঠার জন্য জমি দখল করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মাসুদ পারভেজ বলেন, “জনগণের উচিত তাদের প্রশ্ন করা, যারা সন্দেহজনকভাবে সম্পদ অর্জন করে।”
এর আগে, গত রবিবার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর পিএসসির ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর সিআইডির একটি অভিযানিক দল অভিযান চালিয়ে আবেদ আলীসহ এই চক্রের ১৭ জনকে আটক করে। রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের করা একটি মামলায় মঙ্গলবার ১০ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিন এ মামলায় গ্রেপ্তার ১৭ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এর মধ্যে পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবনসহ সাত আসামি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশনের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। এছাড়া অপর ১০ আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। পরে ১০ আসামির জামিন চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবীরা। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ১০ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এ এস/
Discussion about this post