শীত আসতেই শুরু হয় বিয়ের মৌসুম। এই পবিত্র বন্ধন দুটি মানুষ তথা দুটি পরিবারকে একসুতোয় গেঁথে রাখতে সহযোগিতা করে। আমাদের সমাজে বিশ্বাস করা হয় যে স্বামীর বয়স স্ত্রীর বয়সের চেয়ে বেশি হওয়া উচিত। কিন্তু এই একই সমাজে এমন অনেক সফল দম্পতি আছে, যেখানে স্ত্রী স্বামীর চেয়ে বয়সে বড়।
এমন পরিস্থিতিতে সবার মনেই প্রশ্ন থেকে যায় স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান ঠিক কতটা হওয়া উচিত।
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান কত হওয়া উচিত
বয়স স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আচরণগত স্বভাব ও দৈহিক বিষয়ের প্রভাবক। যদিও এ ক্ষেত্রে কোরআনের সরাসরি নির্দেশনা না থাকলেও ইঙ্গিত আছে। সুরা সাদের ৫২ নং আয়াতে বলা ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং (জান্নাতে) তাদের পাশে থাকবে সমবয়সী আয়তনয়না (জান্নাতি রমণী)।’
অন্যদিকে সুরা ওয়াকিয়ার ৩৫-৩৮ আয়াতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি জান্নাতি রমণীদের উত্তমরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদের করেছি চিরকুমারী, সোহাগিনী, সমবয়স্কা।’
সুতরাং, স্বামী-স্ত্রীর বয়স কাছাকাছি হওয়া বাঞ্ছনীয়। বয়সের বেশি ব্যবধানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। যে কারণে বিবাহে বয়েসের ভারসাম্য প্রয়োজন।
রাসুল (সা.)-এর কন্যা ফাতেমা (রা.)-কে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন আবু বকর (রা.) এবং ওমর (রা.)। খলিফাদ্বয়ের উদ্দেশ্য ছিল—তাঁরা রাসুল (সা.)-এর জামাতা হওয়ার সম্মান অর্জন করবেন। রাসুল (সা.) বলেন, সে [ফাতেমা (রা.)] অনেক ছোট। তাঁদের বয়স অনেক বেশি ছিল। রাসুল (সা.) বয়সের কথা বিবেচনা করে তাঁদের আবেদন নাকচ করে দেন।
উল্লেখিত ঘটনা থেকে বোঝা যায়, মেয়ের বয়স কম হলে স্বামীর বয়স অতিরিক্ত বেশি হওয়া উচিত নয়। বয়সের বেশি অসমতায় বিয়ে দেওয়াও ঠিক নয়। (ইত্তিহাফুস সায়েল বিমা লিফাতিমাতা মিনাল মানাকিবি ওয়াল ফাদাইল, পৃষ্ঠা : ৩৪-৩৬)।
উল্লেখ্য, ইসলামে সবচেয়ে আদর্শ বিয়ে হয়েছিল আলী (রা.) ও ফাতেমা (রা.)-এর বিয়ে। সে সময় ফাতেমা (রা.)-এর বয়স ছিল সাড়ে ১৫ বছর। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, পৃষ্ঠা : ৪২৩)। তবে ইবনে সাদের মতে, সে সময় তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর। আর আলী (রা.)-এর বয়স ছিল ২১, মতান্তরে ২৫ বছর।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্ত্রী যদি স্বামীর চেয়ে বয়সে একটু ছোট হয় তাহলে ভালো। আর নারীর শারীরিক কাঠামো থাকে দুর্বল। ফলে সে আগে বৃদ্ধা হয়ে যায়। যদি দুই-চার বছরের পার্থক্য থাকে তাহলে সমতা আসে। (হুকুকুল জাওজাইন, পৃষ্ঠা ৩৭০)।
তবে শরিয়তে বয়সে তারতম্যময় বিবাহ নিষিদ্ধ নয়। আবার ইসলাম এ বিষয়ে কাউকে উৎসাহও দেয়নি। এ ক্ষেত্রে প্রশস্ততা ও অবাধ স্বাধীনতা আছে। কিন্তু বিষয়টি নির্ভর করে বাস্তবতা, সমাজ, সংস্কৃতির ওপর।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য কত হওয়া উচিত
এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনায় আসার আগে স্পষ্ট মাথায় রাখা জরুরি যে বিজ্ঞানে বিবাহের কোনো ধারণা নেই। বরং এখানে আলোচনা করে জেনে নেওয়া যেতে পারে একজন পুরুষ ও একজন নারীর শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ন্যূনতম বয়স কত হওয়া উচিত।
বিজ্ঞান বলে নারী-পুরুষের শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটলেই তারা শারীরিক সম্পর্কে সক্ষম হন। এই পরিবর্তন ৭ থেকে ১৩ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ঘটতে শুরু করে। যেখানে পুরুষদের মধ্যে এই পরিবর্তন ঘটে ৯ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। এই হরমোনের পরিবর্তন পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে তাড়াতাড়ি ঘটে। এ কারণে তারা পুরুষদের তুলনায় তাড়াতাড়ি শারীরিক সম্পর্ক করতে সক্ষম।
তবে এই হরমোন পরিবর্তনের মানে এই নয় যে কোনো নারী বা পুরুষকে এই বয়সের পরেই বিয়ে করতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশেই যৌন মিলনের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে বলে মানা হয়। আমাদের দেশেও শারীরিক সম্পর্কের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর।
এর পাশাপাশি আমাদের দেশে আইনগতভাবেও বিয়ের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। মেয়েদের বয়স ১৮ বছর এবং ছেলেদের বয়স ২১ বছর রাখা হয়েছে। সে অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রীর বয়সের মধ্যে তিন বছরের ব্যবধান এখানে আইনতভাবে গৃহীত হয়।
তবে সামগ্রিকভাবে ঐতিহ্যগতভাবে আমাদের সমাজে স্বামী-স্ত্রীর বয়সের মধ্যে তিন থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধান গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কিছু কিছু সম্পর্কে এর থেকেও বেশি পার্থক্য থাকতে দেখা যায়। যদিও ভারতীয় সমাজ বলে যে একটি মেয়ের বয়স একটি ছেলের চেয়ে কম হওয়া উচিত। কখনো কখনো স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বয়সের ব্যবধান ১০ থেকে ১৫ বছরেরও হয়।
এই প্রতিবেদনটি শুধু তথ্য প্রদানের জন্য। সামাজিক মাধ্যম ও নানা ওয়েবসাইটের পাওয়া তথ্য থেকে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তবে এসংক্রান্ত আরো তথ্যের জন্য এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের বা আপনার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এ ইউ/
Discussion about this post