অবরুদ্ধ ছোট্ট গাজা উপত্যকাও এবার নিজেদের দখলে নিয়ে নিচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। ফলে ধীরে ধীরে কমে আসছে গাজার আয়তন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া যুদ্ধের পর থেকে অর্থাৎ ১৮ মাসের ব্যবধানে ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার গাজার ১৮৫ বর্গকিলোমিটারই এখন দখলদারদের দখলে। সামরিক বাহিনীর নির্দেশিত মানচিত্রের ওপর ভিত্তি করে জানা গেছে, গাজার প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি অঞ্চল ইসরাইলের দখলে। এএফপি।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বুধবার বলেছেন, সামরিক বাহিনী গাজার ৩০ শতাংশ বিশাল এলাকাকে বাফার জোনে রূপান্তরিত করেছে। সেখান থেকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিকে। এ ছাড়াও ইসরাইলি সেনাবাহিনী একটি প্রশস্ত নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে। মিসরের সঙ্গে যেন আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়, সেই ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। গাজাকে প্রশস্তভাবে ভাগ করার জন্য ফেলাডেলফিক, মোরগ ও নেটজারিমে তিনটি সামরিক করিডরও স্থাপন করেছে সেনারা। ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক রিসার্চের লেকচারার অ্যাগনেস লেভালোইস বলেছেন, গাজা উপত্যকায় তেল আবিবের কৌশল হলো অঞ্চলটিকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলা।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেছেন, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ক্রমবর্ধমান ‘উচ্ছেদ আদেশ’ আসলে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির আদেশ। জাতিসংঘের মতে, অবশিষ্ট স্থান ধ্বংসস্তূপে আচ্ছাদিত। বেসামরিক অবকাঠামোর ৮০ শতাংশ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। এমন হাজারো আন্তর্জাতিক সমালোচনার মাঝেও বন্ধ নেই গাজায় ইসরাইলি হামলা। নতুন করে ইসরাইলি বিমান হামলায় একই পরিবারের ১০ জনসহ ১৫ জন নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে ইসরাইলের আলাদা দুই হামলায় এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। শুক্রবার গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি এ তথ্য জানিয়েছে। সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, আমাদের কর্মীরা একই পরিবারের ১০ জনের মরদেহ এবং অনেক মানুষকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের পূর্বদিকের বানি সুহাইলা এলাকায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর হামলার শিকার হওয়া বারাকা পরিবারের বাড়ি ও আশপাশের বাড়িগুলো থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে।
ইসরাইলি বিমান হামলায় বৃহস্পতিবার কমপক্ষে ৪০ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছিল সিভিল ডিফেন্স। নিহতদের বেশির ভাগই বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা ছিলেন। শুক্রবারও হেলিকপ্টার থেকে গাজার দক্ষিণে চালানো হয়েছে হামলা।
স্থানীয় ফিলিস্তিনি মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসরাইলি সাঁজোয়া যানগুলোও ভূখণ্ডের উত্তরে একই এলাকায় গুলি চালিয়েছে। দক্ষিণ গাজায় ইসরাইলের ট্যাংকগুলো খান ইউনিসের পূর্বে অবস্থিত আল-কারারা শহরে ভারী গোলাবর্ষণ চালিয়েছে। এ ছাড়াও মধ্য গাজার মাগাজি শরণার্থীশিবিরেও হামলার খবর পাওয়া গেছে। তবে বিচ্ছিন্ন সব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে হামাস আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলের সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, তারা অবিলম্বে একটি পূর্ণ বন্দিমুক্তি চুক্তির জন্য আলোচনায় প্রস্তুত, যার মাধ্যমে সব জিম্মিকে মুক্তি দিয়ে যুদ্ধের অবসান এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করা হবে।
হামাসের প্রধান আলোচক খালিল আল-হাইয়া বলেন, আমরা এমন কোনো আংশিক চুক্তি মেনে নেব না, যা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করে।
ইসরাইলের প্রস্তাবে ছিল ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ১০ জন জিম্মিকে মুক্ত করার শর্ত। ইসরাইলের তথ্যমতে, এখনো ৫৯ জন জিম্মি বন্দি আছেন, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরে হামলা অব্যাহত: শুধু গাজা নয়, অধিকৃত পশ্চিম তীরেও অব্যাহত রয়েছে ইসরাইলের আগ্রাসন। শুক্রবার পশ্চিম তীরের সালফিট গভর্নরেটের বিদ্যা শহরে ইসরাইলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের তাদের জমিতে হামলা চালিয়েছে। ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, হামলায় একজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়াও নাবলুস গভর্নরেটের বেইতা শহরের একটি পাহাড় জাবাল আল-উরমাতে হামলা চালায়।
সূত্রঃ যুগান্তর
এম এইচ/
Discussion about this post