ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অনুমতির পর গাজায় প্রবেশ করেছে ত্রাণসামগ্রীবোঝাই ১০০টি ট্রাক। বুধবার ময়দা, শিশুখাদ্য ও স্বাস্থ্যসামগ্রী নিয়ে এ ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশ করে। তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, এ ত্রাণ এখনো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
মানবিক সহায়তায় নিয়োজিত কর্মীরা জানান, প্রায় ১১ সপ্তাহের অবরোধের পর সোমবার ও মঙ্গলবার গাজায় মোট ৯৮টি ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে সরবরাহকৃত এ ত্রাণ চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল এবং তা গাজার স্যুপ কিচেন, বেকারি, বাজার কিংবা হাসপাতালগুলোতেও পৌঁছেনি। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) কর্মকর্তা আন্তোন রেনার্দ বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য ত্রাণ এসেছে, আর যেটুকু এসেছে, তা সাধারণ মানুষের নাগালে পৌঁছায়নি।’ দীর্ঘদিনের অবরোধে গাজার পরিস্থিতি চরম মানবিক সংকটে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক মহল এবং ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও সমালোচনার মুখে পড়েছে নেতানিয়াহু সরকার। ইসরায়েলের একজন বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘অবরোধের মাধ্যমে ইসরায়েল দিন দিন মিত্র হারাচ্ছে।’ রেনার্দ আরও জানান, গাজা সীমান্তে হাজার হাজার টন খাদ্য এবং প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী অপেক্ষমাণ রয়েছে। কিন্তু নিরাপদ বিতরণ নিশ্চিত না হওয়ায় এসব ত্রাণ এখনো আটকে আছে। ফলে গাজার প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষ এখনো দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। গাজার বাসিন্দা মাহমুদ আল-হো জানান, প্রতিদিন সন্তানদের জন্য খাবার সংগ্রহে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কোনো কোনো দিন তাকে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তিনি বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে এক প্লেট খাবার পেয়েছি ছয়জনের জন্য, অথচ সেই খাবার একজনের জন্যও যথেষ্ট নয়।’ জাতিসংঘ জানিয়েছে, কারেম শালোম সীমান্তে নিরাপত্তাজনিত কারণে বহু ত্রাণবাহী ট্রাক আটকে আছে। তবে বুধবার রাতে কিছু ট্রাককে গাজার অভ্যন্তরে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। রাফার দক্ষিণাঞ্চলে ৭৫টি ময়দা বহনকারী ট্রাক এবং আরও এক ডজনের বেশি ট্রাকে পুষ্টিকর খাদ্য ও চিনি বহন করে গাজায় প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পরিবহন ব্যবসায়ী নাহিদ শাহাইবার।
এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত দুই দিনে অনাহারে আরও ২৯ জন মারা গেছে, যাদের বেশির ভাগই শিশু। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাজেদ আবু রমজান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে গাজার ২১ লাখ মানুষ চরম অনাহারের মুখে পড়বে, বাড়বে অনাহারে মৃত্যু। মৌলিক খাবারের ঘাটতি এবং আকাশছোঁয়া দামের কারণে পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে।
প্রসঙ্গত , চলতি বছরের মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণ প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের দাবি, হামাস এই ত্রাণ লুট করে নিজেদের পুনর্গঠনে ব্যবহার করছে। তবে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে অবশেষে ত্রাণ প্রবেশে অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছে নেতানিয়াহু সরকার। রয়টার্স
এম এইচ/
Discussion about this post