অবৈধপথে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাত্রার সময় ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া উপকূল থেকে এক অপ্রাপ্তবয়স্কসহ ৩০ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে ফরাসি দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের (এমএসএফ) উদ্ধারকারী জাহাজ জিও ব্যারেন্টস।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইউরোপে অভিবাসন সংক্রান্ত সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস।
জানা যায়, শুক্রবার রাতে লিবিয়া উপকূলের আন্তর্জাতিক জলসীমায় উদ্ধার অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। ওই সময় একটি মোটরচালিত নৌকায় ঝুঁকিতে থাকা ৩০ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে জিও ব্যারেন্টস জাহাজে তোলা হয়।
রুবেল গাজী নামে একজন অভিবাসনপ্রত্যাশী বলেন, আমি এক মাস তিন দিন আগে বাংলাদেশ ছেড়ে আসি। বাংলাদেশ থেকে বিমানে বাহরাইন ও ইস্তাম্বুল হয়ে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে পৌঁছেছিলাম। একটি কোম্পানিতে কাজের ভিসায় লিবিয়ায় এসেছিলাম।সমুদ্র যাত্রার আগে দালালের গেইম ঘরে তিন থেকে চার দিন অনেক কষ্টে ছিলাম। খাবার, পানি ও গোসল নিয়ে অনেক কষ্ট পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, লিবিয়া উপকূল থেকে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে যাত্রার পর রাত ৯টার মধ্যে আমাদের এমএসএফ উদ্ধার করে। উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন আমাদের ইটালির বারি শহরে উপকূলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই দালালেরা দ্রুত আমাদের নৌকায় তুলেছিল। যাত্রার আগে আমরা অপ্রস্তুত ছিলাম।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস কাজ করছে।
সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সলিল সমাধি হিসবে পরিচিতি পেয়েছে। এই ৩০ বাংলাদেশিকে নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় নেই কোনো সরকারি উদ্ধারকারী জাহাজ। বছরের পর বছর ধরে গুটি কয়েক বেসরকারি উদ্ধার জাহাজ এ রুটে সক্রিয় থাকলেও ইটালিসহ বিভিন্ন সরকারের নানা আইনি মারপ্যাঁচে বেগ পেতে হচ্ছে এনজিওগুলোকে।
নভেম্বরের শুরুতে ভূমধ্যসাগরে নৌকা থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধারের পর জার্মান উদ্ধারকারী জাহাজ সি-আই ফোরকে আবারও ইটালিতে আটক করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের নির্দেশনা অমান্য করার অভিযোগে জাহাজটিকে আটক করা হয়৷ নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ আনার পাশাপাশি জাহাজটিকে তিন হাজার ইউরো জরিমানা করেছে ইটালি৷
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লিবিয়া উপকূল থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টারত অভিবাসীদের মধ্যে মিসর, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফ্রিকান দেশগুলোর নাগরিকরা শীর্ষে রয়েছেন।
অনিয়মিত অভিবাসীদের সাগরপথে আসার সংখ্যা না কমায় ইতালিতে দিন দিন কঠিন করা হচ্ছে আশ্রয় আইন। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন আশ্রয়প্রার্থীরা। ক্যাম্পে আবাসন সংকট, আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাখা, স্বাস্থ্য সুবিধাসহ রাজনৈতিক আশ্রয়ের নানা দিক কঠোর করে অভিবাসীদের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করছে ইতালি সরকার।
Discussion about this post