মজুদদারি হলো গুটিকয়েক মজুদদারের হাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী গচ্ছিত থাকা এবং তাদের ইচ্ছামতো মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি করা। এটি অমানবিক, নৈতিকতাবিবর্জিত নিষিদ্ধ কাজ। ইসলাম মুনাফার উদ্দেশ্যে খাদ্যসামগ্রী মজুদ করাকে হারাম করেছে। এটি ইসলাম কর্তৃক খাদ্যদ্রব্য সুষম বণ্টনের একটি উজ্জ্বল দিক।
মানুষের সার্বিক কল্যাণের প্রতি খেয়াল রাখা ইসলামের অন্যতম মৌলিক আদেশ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কল্যাণকামিতাই ধর্ম।’ সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, কার জন্য, হে আল্লাহর রাসুল! নবীজি বলেন, ‘আল্লাহ, রাসুল, মুসলিম নেতা এবং সর্বসাধারণের জন্য।’ (আবু দাউদ : ৪৯৪৪)
মজুদদারির বিধান
ইসলামে খাদ্যসামগ্রী মজুদ করা নিষিদ্ধ।
বেশি মূল্যে খাদ্য বিক্রির মানসে খাদ্যদ্রব্যের বাজারমূল্য কম থাকা অবস্থায় ক্রয় করে গুদামজাত করা এবং অত্যধিক প্রয়োজনের সময় উচ্চমূল্যে তা বিক্রয় করা—সব ইসলামী আইনজ্ঞের কাছে তা হারাম। (আল-ফিকহুল মুয়াসসার ৬ : ৪৫)
এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জনসাধারণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এমন হীন কর্মে যারা যুক্ত তারাই অবৈধ মজুদদারি। এমন মজুদদারি নিষিদ্ধের মাধ্যমে ইসলাম সাধারণ জনগণকে সার্বিক ক্ষতি থেকে হেফাজত করেছে।
যেসব পণ্য মজুদ করা নিষিদ্ধ
সমাজের বণিক, ধনী, দুস্থ, অসহায় সব শ্রেণির মানুষের খাদ্যসামগ্রীর অবাধ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে ইসলাম খাদ্যের অবৈধ মজুদ নিষিদ্ধ করেছে। মানুষের দৈনন্দিনের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, খাদ্যসংশ্লিষ্ট গুরুত্বগূর্ণ উপাদান, উপকরণ, খাদ্যশস্য ইত্যাদি চড়াদামে বিক্রির ইচ্ছায় মজুদ করা হারাম। (আল-জামে লি-উলুমি ইমাম আহমাদ ৯ : ১৫৯)
মজুদদাররা আল্লাহর অভিশাপপ্রাপ্ত
দুনিয়ার কেউই আল্লাহর বিরাগভাজন হতে চায় না। চায় না অভিশপ্ত হতে। কারণ যার প্রতি আল্লাহর অভিশম্পাত তার ধ্বংস অনস্বীকার্য।
তার পরও মানুষ এমন কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে, ধ্বংসই যার সুনিশ্চিত পরিণাম। অবৈধ খাদ্যসামগ্রী মজুদ করা তেমনি একটি কাজ, যা মানুষকে লানতপ্রাপ্ত বানায়। মজুদদারের প্রতি নবীজি অভিসম্পাত করেছেন। ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আমদানিকারক রিজিকপ্রাপ্ত আর মজুদদাররা লানতপ্রাপ্ত, অভিশপ্ত।’ (মুসনাদে দারেমি : ২৫৮৬)
মজুদদার ব্যক্তির প্রতি দুনিয়াবি গজব
অধিক লাভের জন্য অসদুপায়ে পণ্য মজুদ রাখা ইসলামে ঘৃণিত ও নিষিদ্ধ কাজ। এর কারণে মানুষের জীবনযাপন কষ্টকর হয়, বিশেষত গরিব, অসহায় লোকেরা নিগৃহের স্বীকার হয়। নবীজি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের খাদ্যদ্রব্য মজুদ করে আল্লাহ তাকে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত করবেন অথবা দেউলিয়া বানাবেন।’ (আল মুন্তাখাবুল আদাবি : ১৭)
যারা মজুদদার তারা নবীজি কর্তৃক চিহ্নিত পাপিষ্ঠ। নবীজি বলেছেন, ‘পাপিষ্ঠ ছাড়া কেউ মজুদদার হতে পারে না।’ (মুসলিম : ১২২৮)
লাভ-ক্ষতির সম্ভাবনায় পণ্য মজুদ রাখার বিধান
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের ছেলে আবুল ফজল সালেহ বলেন, আমি আমার বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম। একজন ব্যক্তি বসরা থেকে খেজুর ক্রয় করে বাগদাদ অথবা আমাদের মক্কা-মদিনার কোনো একটি শহরে বিক্রির জন্য এলো। সেখানে এসে দেখল, খেজুরের দামে দরপতন হয়েছে। এ অবস্থায় সে ক্ষতি করে বিক্রি করতে চাচ্ছে না। এখন যদি সে এই খেজুরগুলো গুদামজাত করে তবে কি সে অবৈধ মজুদকারী হিসেবে গণ্য হবে? জবাবে ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেন, আশা করি সে অবৈধ মজুদকারী হবে না। (মাসায়েলুল ইমাম আহমাদ ২ : ২৩৭)।
পরিবারের সদস্যদের জন্য মজুদ করা
যে ব্যক্তি নিজ পরিবারের সদস্যদের জন্য এবং গৃহপালিত পশুর জন্য এক কিংবা দুই বছরের খাদ্য মজুদ রাখে তাহলে সে অবৈধ মজুদদার বলে বিবেচিত হবে না। ওমর (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নবীজি তাঁর পরিবারের জন্য এক বছরের খাবার সংরক্ষণ করেছিলেন।
এস এইচ/
Discussion about this post