কথায় কথায় গুলি করা চট্টগ্রামের শীর্ষ ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ পুলিশের ধাওয়া খেয়ে গুলি ছুড়ে পালিয়ে গেছেন। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে নগরের অক্সিজেন এলাকার একটি বাসায় সাজ্জাদ অবস্থান করছেন জানতে পেরে পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় সাজ্জাদ গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান। তাঁর ছোড়া গুলিতে এটিএম বুথের নিরাপত্তা কর্মীসহ দুজন আহত হন।
সন্ত্রাসের জগতে পা রেখেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ। কথায় কথায় গুলি ছোড়ার স্বভাব তাঁর। দুই মাসের ব্যবধানে তিন-তিনটি হত্যাকাণ্ডে ও ১০ মামলার আসামি হয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে শীর্ষ সন্ত্রাসীর তকমাও তাঁর দখলে গেছে। শিবিরের শীর্ষ ক্যাডার হিসেবে একসময় পরিচিত বড় সাজ্জাদের অনুসারী বলে এলাকায় ছোট সাজ্জাদ হিসেবে পরিচিতি পান তিনি।
হাল আমলে নিজের অপরাধজগৎ সুসংহত করতে চট্টগ্রাম বিএনপির এক নেতার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন তিনি। এ-সংক্রান্ত ছবি এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। তাঁর বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ এলাকার লোকজনকে স্বস্তি দিতে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে অভিযানে নামে পুলিশের একটি দল। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছুড়তে থাকেন সাজ্জাদ। পুলিশও ছয় রাউন্ড পাল্টা গুলি ছোড়ে। কিন্তু সাজ্জাদ মুহূর্তেই অধরা হয়ে যান। তাঁর ছোড়া গুলিতে স্থানীয় দুজন মারাত্মক আহত হন। পরে পুলিশ সাজ্জাদের অবস্থান করা ওই বাসা থেকে তাঁর স্ত্রী তামান্না বেগম, দুই যুবকসহ তিনজনকে আটক করেছে। তবে দুই যুবকের নাম-পরিচয় জানায়নি পুলিশ।
পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন এলাকায় একটি বাসায় সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারে আজ ভোরে অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি টের পেয়ে সাজ্জাদ গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান। তাঁর ছোড়া গুলিতে স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ জাবেদ ও সিটি ব্যাংকের একটি এ টি এম বুথের নিরাপত্তাকর্মী কাজল কান্তি দে গুলিবিদ্ধ হন। গোলাগুলির ঘটনার পর পুলিশের সোয়াত দল যায় ঘটনাস্থলে। কিন্তু সাজ্জাদ ততক্ষণে লাপাত্তা হয়ে যান।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মো. রইছ উদ্দিন বলেন, গত জুলাই ও সেপ্টেম্বরে তিনটি হত্যাকাণ্ডের পর শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ধরতে পুলিশ ধারাবাহিকভাবে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। একইভাবে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে অক্সিজেন এলাকার একটি বাসায় সাজ্জাদ অবস্থান করছেন জানতে পেরে পুলিশ অভিযান চালায়। অভিযানকালে সাজ্জাদ গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান। তাঁর ছোড়া গুলিতে দুজন আহত হন।
এদিকে সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে ধরতে না পারায় নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও হাটহাজারী থানার বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। মূলত নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তোলেন এই সন্ত্রাসী। অন্যান্য ক্ষেত্রেও এলাকায় বেপরোয়া চাঁদাবাজি করে থাকেন সাজ্জাদ।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানার পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। বায়েজিদ বোস্তামী থানাসংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে তিনি। নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন অনন্যা, শীতলঝর্ণা, কালারপুল, বায়েজিদ থানার সীমান্তবর্তী হাটহাজারীর কুয়াইশ, নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল ও পাঁচলাইশ এলাকায় ১৫-২০ জনের বাহিনী নিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালান সাজ্জাদ।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, চাঁদা না পেলেই সাজ্জাদ গুলি করেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরের চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া জাগরনী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে মাইক্রোবাস থেকে নেমেই স্থানীয় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে (২৭) গুলি করে হত্যা করে সাজ্জাদ বাহিনী। চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার কালারপুল এলাকায় শটগান হাতে সাজ্জাদ হোসেনসহ আরও দুজন গুলি করতে করতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশ করেন। এরপর ওই ভবন মালিকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
এর আগে ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এই খুন হয়।
চাঞ্চল্যকর এই ডাবল মার্ডারের ঘটনার দুই মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়। এর আগে ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসায় গুলি করেন সাজ্জাদ তার সহযোগীদের নিয়ে। আর গত বছরের ২৭ অক্টোবর চাঁদা না পেয়ে দলবল নিয়ে মো. হাছান নামের এক ঠিকাদারের চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকার বাসায় গিয়েও গুলি করে তারা।
এ ইউ/
Discussion about this post