‘আজরাইল তো জান কবজে ছাড় দেয়। কিন্তু ঠিকাদারি বিলের ৬ পার্সেন্টের টাকা না দিয়ে মাফ পাওয়া যায় না।’ এমন মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে গাইবান্ধা পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) শফিউল ইসলামের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি অফিসে বসে একটি সড়ক পাকাকরণ কাজের দায়িত্বরত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনের কাছে কমিশন ও ঘুষ হিসেবে টাকা দাবি করার কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ছড়িয়ে পড়া রেকর্ডে শফিউল ইসলামকে ক্যালকুলেটরে হিসেব করে টাকা দাবি করতে শোনা যায়। এ সময় তাদের সঙ্গে কমিশনের টাকা পেতে শফিউলকে দর কষাকষি করতেও শোনা যায়।
১০ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ছড়িয়ে পড়া ওই অডিওতে শফিউল ইসলাম প্রতিটি কাজের বরাদ্দ অনুসারে ৬ পার্সেন্ট (শতাংশ) টাকা দাবি করেন। এ সময় টাকা কম দিতে চাইলে প্রকৌশলী বলেন, ‘একটি টাকাও কম দেওয়া যাবে না। টাকা কম দিলে বিল পাস করা যাবে না।’ এ ছাড়া অডিওতে ওই ঠিকাদারের সঙ্গে আরও অনেক বিষয় নিয়েই কথা বলতে শোনা যায় শফিউলকে।
ভুক্তভোগী ওই ঠিকাদারের নাম ফিরোজ কবির। তিনি দাবি করেন, সড়ক পাকাকরণ কাজে মোট বরাদ্দের টাকা থেকে প্রকৌশলী শফিউল ইসলামকে তার দাবি করা কমিশনের টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন। তার কাছে ঘুষ চাওয়ার কথোপকথনটি গত বছরের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ের।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রকৌশলী শফিউল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ১৫ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেন বলেও জানান ঠিকাদার ফিরোজ কবির। অভিযোগের সঙ্গে একটি পেনড্রাইভে তার কাছে শফিউলের কমিশন তথা ঘুষ চাওয়ার কথোপকথনের অডিও রেকর্ডও জমা দেন তিনি।
এদিকে, লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৌশলী শফিউল ইসলামের বিরুদ্ধে গত ৫ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন তদন্ত সম্পন্ন করেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন।
তবে এক মাস অতিবাহিত হলেও অজ্ঞাত কারণে এখনও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। এতে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। তবে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে অভিযুক্ত শফিউল ইসলামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন বলেন, ‘এখনও তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এর আগে কিছু বলা যাবে না।’
তবে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি অভিযুক্ত উপসহকারী প্রকৌশলী শফিউল ইসলামের। এমনকি তার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
উল্লেখ, দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে গাইবান্ধা পৌরসভায় উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন শফিউল ইসলাম। দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করার সুবাদে আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে শফিউল ইসলাম নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য করলেও তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অফিস স্টাফদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও অসদাচরণের একাধিক অভিযোগও রয়েছে।
এ ইউ/
Discussion about this post