বিধ্বংসী ব্যাটিং, স্টাইলিশ লেগ স্পিন আর নায়কোচিত উদযাপন মিলিয়ে ক্রিকেটের এক কমপ্লিট প্যাকেজ বলা হতো তাকে। ১৯৯৬ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে কেনিয়ার বিপক্ষে প্রথমবার ওয়ানডেতে মাঠে নেমে ৩৭ বলে বিশ্ব কাঁপানো সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নিজের আগমন বার্তা জানিয়ে দিয়েছিলেন। সেই রেকর্ড তিনি ১৮ বছর ধরেও রেখেছিলেন। অবিশ্বাস্য ক্যারিয়ারে বিশাল বিশাল ছক্কা হাঁকানোর জন্য আফ্রিদি সবার কাছে ‘বুমবুম’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রেকর্ড ৪৭৬টি ছক্কা হাঁকানোর কীর্তিও আছে তার ঝুলিতে। এছাড়া বল হাতে তার ঘূর্ণিতে কুপোকাত হয়েছেন অনেক ব্যাটসম্যান।
পাকিস্তানের সাবেক ও অন্যতম জনপ্রিয় ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদি। ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন ২০১৮ সালে, তবে এখনো তাকে নিয়ে চর্চা হয়। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডারের ৪৭তম জন্মদিন আজ।
তার দুর্দান্ত ক্যারিয়ারে ৩৯৮টি ওয়ানডে ম্যাচে ৮০৬৪ রান আর ৩৯৫ উইকেট নেয়ার কীর্তি রয়েছে। পাকিস্তানের হয়ে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ৫২৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ডও আছে তার নামে। ব্যাটসম্যান আফ্রিদির ভয়ডরহীন ব্যাটিং দৃষ্টিনন্দন হলেও এজন্য তাকে প্রায়ই ভুগতে হয়েছে। অতি আগ্রাসী ব্যাটিং করার কারণেই ওয়ানডে ক্রিকেটে ৮ হাজারের বেশ রান করেও আফ্রিদির ব্যাটিং গড় মাত্র ২৩.৫৭। ৬ সেঞ্চুরি আর ৩৯ ফিফটির ওয়ানডে ক্যারিয়ারকে তাই সাদামাটাই মনে হতে পারে।
আর টেস্ট ক্রিকেটে তার থিতু না হতে পারার কারণও এটাই। মাত্র ২৭ টেস্টের ক্যারিয়ারে মাত্র ৫ সেঞ্চুরি আর ৮ ফিফটি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাকে। আবার টি-টোয়েন্টিতে তার কার্যকারিতা অনেক বেশি। ব্যাট হাতে ৪টি ফিফটি আছে আফ্রিদির নামের পাশে। পাশাপাশি টি-টোয়েন্টিতে তার স্ট্রাইকরেট ১৫০। বল হাতেও আফ্রিদি ছিলেন দুর্দান্ত। টি-টোয়েন্টিতে নিয়েছেন ৯৮ উইকেট।
কিন্তু আফ্রিদিকে শুধু ব্যাটিং দিয়ে মাপলে চলবে না। তার বোলিং হচ্ছে আসল শক্তির জায়গা। বোলার হিসেবে যেকোনো মুহূর্তে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়ার সামর্থ্য ছিল তার। ৩৯৮ ওয়ানডেতে হাত ঘুরিয়ে ৩৯৫ উইকেট তার বোলিং সামর্থ্যকে ঠিক তুলে ধরতে সক্ষম নয়। স্পিন বোলার হলেও তার বলের গতি প্রায়ই ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করে দিতেন।
আফ্রিদির সবচেয়ে বড় কীর্তি পাকিস্তানের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা। এছাড়া ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অভিষেক আসরে সিরিজ সেরা আর পরের আসরের ফাইনালে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছিলেন আফ্রিদি। ২০০৯ সালে পাকিস্তান প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতে। যার মূল কারিগর ছিলেন এই আফ্রিদি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েও বেশকিছুদিন নানা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ক্রিকেট খেলে গেছেন আফ্রিদি। পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল), ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, বিগ ব্যাশ ও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) মতো টুর্নামেন্টগুলোতে নিয়মিত মুখই ছিলেন আফ্রিদি।
এফএস/
Discussion about this post