আদালতে কথা বলতে গিয়ে আইনজীবীদের তোপের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক সাংবাদিক ফারজানা রুপা। তোপের মুখে গোলাপ কথা বলেননি। তবে ফারজানা রুপা ২/১ একটি কথা বললেও আর এগোতে পারেননি।
সোমবার (২৬ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেনের আদালতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সময় রাজধানীর আদাবর থানার গার্মেন্টস কর্মী রুবেল হত্যা মামলার রিমান্ড শুনানিতে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে আদালত আবদুস সোবহান গোলাপের সাত দিন এবং শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আদালত থেকে তাদের যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শাকিল আহমেদ বলেন, সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ না। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সাংবাদিকতা করেছি।
এরআগে এদিন তাদের তিন জনকে বিকেল ৫ টার দিকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার পরিদর্শক মিন্টু চন্দ্র বণিক শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপাকে গ্রেপ্তার দেখানোসহ ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। গোলাপেরও ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।
৫ টা ৮ মিনিটের দিকে তাদের এজলাসে তোলা হয়। ৫ টা ১২ মিনিটের দিকে আদালতের বিচারকাজ শুরু হয়।
প্রথমে শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর তিন আসামির রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়।
রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডের প্রার্থণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, গোলাপ মামলার এজাহারনামীয় ৭৫ নম্বর আসামি। অপর দুই জন তদন্তেপ্রাপ্ত আসামি। তারা ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত।
বিএনপিপন্থী আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকীও আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন তার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টারে চলাফেরা করে। আর গোলাপ অবৈধ সংসদের অনির্বাচিত সদস্য। পিয়ন যদি ৪০০ কোটি টাকার মালিক হন, গোলাপ হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। টাকা পাচার করেছে, বেগমপাড়ায় বাড়ি করেছে। আন্দোলনের সময় সে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালাতে প্ররোচনা দিয়েছে।
শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপার বিষয়ে বলেন, তারা শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার হতে সাহায্য করেছে।সরকারকে আরও কঠোর হয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালাতে টেলিভিশনে টকশো করে জনমত করে। সাংবাদিকদের আমরা সম্মান করি। কিন্তু তারা সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতা করেছে।
শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপার আইনজীবী বলেন, তারা প্রথিতযশা সাংবাদিক। তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন না। পেশাগত দায়িত্ব পালনে তখন অফিসে ছিলেন। ঘটনার ওপর সৃষ্টি করে মামলা। আরেক মামলায় রিমান্ডে ছিলো। আজকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ড আবেদন করেছে। অথচ রিমান্ডে নেওয়ার মত সাধারণ উপাদানও নেই।
গোলাপের আইনজীবী বলেন, তিনি অসুস্থ, বাম পায়ে সমস্যা। দাঁড়াতে পারেন না। সপ্তাহে ৬ দিন থেরাপী দিতে হয়। এছাড়া হার্টের সমস্যা রয়েছে। রিমান্ড বাতিল করে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।
এসময় এ আইনজীবী বলেন, জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও এ মামলার আসামি। তখন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এর প্রতিবাদ করেন। তারা বলেন, সাকিব এখানে নেই। তার প্রসঙ্গ কেন আসবে। তখন আব্দুর রশীদ নামে এক আইনজীবী বলেন, এমন নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা আর কোথাও হয়নি। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হত্যা করা হয়েছে। এরা গণহত্যাকারী। তাদের প্রত্যেকেরই ১০ দিনের রিমান্ড হওয়া প্রয়োজন। না হলে যারা মারা গেছে তাদের আত্মা কষ্ট পাবে।
এরপর আদালত আসামিদের বক্তব্য শুনতে চান। আইনজীবীরা এর বিরোধীতা করেন। তখন আদালত বলেন, এক মিনিটে কথা শেষ করবেন। গোলাপ কথা বলা শুরু করেন। তিনি বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তখন আইনজীবীরা চিৎকার করে বলেন, তার বয়স কত। সে কিসের মুক্তিযোদ্ধা। তোপের মুখে পড়ে গোলাপ আর কথা বলেননি।
তখন ওমর ফারুক বলেন, তাদের আইনজীবী কথা বলেছে। তাদের তো কথা বলার প্রয়োজন নেই। তারা কথা বললে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাবে।
এরই মাঝে ফারজানা রুপা আদালতকে বলেন, মাননীয় আদালত, আপনি আদালত পরিচালনা করছেন, না উনারা করছেন? এটা কি আদালত অবমাননার শামিল না। পরে আদালত তাদের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এরপর তাদের সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শাকিল আহমেদ বলেন, সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ না। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সাংবাদিকতা করেছি।
টিবি
Discussion about this post