নোয়াখালী হাতিয়ায় অস্ত্রে ভয় দেখিয়ে এক আওয়ামী লীগ নেতার মাদ্রাসায় পড়ুয়া মেয়েকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আরিফ হোসেন নামে এক বিএনপি নেতার ছেলের বিরুদ্ধে।
শনিবার (২৩ মার্চ) দিবাগত রাতে ঘটনাটি ঘটে হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ শতফুল বাজারের পাশে। পরে আহত অবস্থায় সেই ছাত্রীকে বাড়ির পাশে খাল পাড় থেকে উদ্ধার করে এলাকাবাসী।
অভিযুক্ত আরিফ হোসেন উপজেলার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. সাহেদ মেম্বারের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় মুখোশধারী কয়েকজন যুবক রাতে এসে মাদ্রাসা ছাত্রীর বাড়িতে হানা দেয়। তারা পরিবারের সবাইকে জিম্মি করে মেয়েটিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এসময় বাধা দিতে গেলে মেয়ের মা ও স্বজনদের পিটিয়ে আহত করা হয়। তারা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে চিৎকার করে মানুষজনকে জানায় স্বজনরা। তাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে পিছন থেকে ধাওয়া করলে তারা মেয়েটিকে খাল পাড়ে পেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা মেয়েটিকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে রাতে শত শত লোক এসে ভুক্তভোগীদের বাড়িতে এসে জমায়েত হয়।
শতফুল বাজার মসজিদের ইমাম মাওলানা আফসার জানান, রাতে তারাবির নামাজ শেষ করে ভুক্তভোগীর বাড়িতে যান। এসময় ভুক্তভোগীকে ঘরের মধ্যে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পান।
তিনি বলেন, অভিযুক্তের জন্য কিছুদিন আগে এই মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। মেয়ের পরিবার তা প্রত্যাখান করেন। এজন্য ক্ষিপ্ত হয়ে তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে নিঝুমদ্বীপের ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। দেশের আইনশৃঙ্খলা নেই বললে চলে। মেয়ের বাবা আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত বিধায় তারা এই ঘটনাটি ঘটানোর সাহস পেয়েছে।
এদিকে ঘটনার পরপরই বিষয়টি ধাপাচাপা দেওয়ার জন্য অভিযুক্তের বাবা, নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আনোয়ার মেম্বার, যুবদলের সভাপতি আশ্রাফ, ইব্রাহিম পাটি সহ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ভুক্তভোগীর বাড়ি যান। তারা এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এছাড়াও তারা মাদ্রাসা ছাত্রীকে অভিযুক্তের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব দেন।
এই বিষয়ে নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি আশ্রাফ জানান, তারা এখন মাদ্রাসা ছাত্রীর বাড়িতে অবস্থান করছেন। ঘটনাটি মীমাংসার চেষ্টা চলছে। মাদ্রাসা ছাত্রীর সঙ্গে অভিযুক্তের বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় নিঝুমদ্বীপে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অনেকে এই ঘটনার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রাতে একাধিক নাম্বার থেকে সাংবাদিকদের কাছে ফোন দিয়ে নিঝুমদ্বীপ আসার জন্য বলা হয়েছে। তবে অভিযুক্তরা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত বিধায় কেউ সরাসরি প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই বিষয়ে মাদ্রাসা ছাত্রীর বাবা বলেন, তার মেয়ে এখনো অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। রাতে ডাক্তার এনে তাকে চিকিসা দেওয়া হয়েছে। রাতে ছেলের বাবা এসে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তা প্রত্যাখান করেচি। এত বড় একটি ঘটনা ঘটানোর পরও তারা এই ছেলের সাথে মেয়ের কিভাবে বিয়ের চিন্তা করে আমি বুঝতে পারছিনা। আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রেখেছি।
তিনি আরো জানান, রাত থেকে শুধু হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
অভিযুক্তের বাবা নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. সাহেদ মেম্বার অপহরণের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, মেয়ের বাড়ির কাছাকাছি একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা খবর পেয়ে মেয়েকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি।
হাতিয়া থানা পরিদর্শক (তদন্ত) খোরশেদ আলম বলেন, ঘটনাটি আমি জেনেছি, মেয়েটিকে অপহরণ করে নেয়ার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু নিতে পারেনি। মেয়েটি বর্তমানে তার নিজ বাড়িতে আছে। পরিবারেরর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ইউ/
Discussion about this post