শরীয়তপুরে এক তরুণকে ইতালি পাঠানোর প্রলোভন দিয়ে লিবিয়া নিয়ে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরে দালাল চক্রের মাধ্যমে লিবিয়ার মাফিয়ারা তাকে আটকে রেখে নির্যাতন ও পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ হাতিয়ে নেয় বলেও জানা যায়। দালালের মাধ্যমে ২৭ লাখ টাকা দিলেও ওই তরুণের মুক্তি মেলেনি। তরুণকে ফিরে পেতে পরিবারের আকুতি।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের আগস্টে লিবিয়া দিয়ে ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে শরীয়তপুর জাজিরা উপজেলার ছোবান্দি মাদবর কান্দি এলাকার আইয়ুব আলী মোল্লার ছেলে রফিক মিয়ার পরিবারের কাছে থেকে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় একই উপজেলার বাচ্চু মাতুব্বর কান্দি এলাকার দালাল জসিম মাতুব্বর। পরে রফিককে প্রথমে লিবিয়া নিয়ে যায়। সেখানে তাদের রিসিভ করে ‘মানব পাচারকারী চক্রের’ বাংলাদেশি দুই সদস্য শফিক ও সালাম।
তারা লিবিয়া থেকে ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে দালাল চক্র জসিম মাতুব্বর মাধ্যমে ভুক্তভোগী রফিক মিয়ার পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে মোট ২৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে দালাল জসিম মাতুব্বর সহযোগিতায় তার সঙ্গীরা মিলে ওই তরুণ রফিক মিয়াকে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়।
মাফিয়ারা তরুণ রফিককে জিম্মি করে লিবিয়ার একটি স্থানে ১ মাস ৪ দিন ধরে আটকে নির্যাতন করছে। এখন আরও ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে মাফিয়া চক্র। ওই টাকার জন্য মাফিয়া চক্র বাংলাদেশে রফিক মিয়ার পরিবার ও তার আত্মীয় স্বজনদের ভিডিও কল করে জিম্মিদশা ও নির্যাতনের দৃশ্য দেখাচ্ছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রফিক মিয়ার বাবা আইয়ুব আলী মোল্লা বাদী হয়ে জাজিরা থানায়, র্যাব, সেনাবাহিনী, আইন উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি ভুক্তভোগী পরিবার সংবাদ সম্মেলনও করেছেন।
ভুক্তভোগী রফিক মিয়ার বাবা আইয়ুব আলী মোল্লা বলেন, দালাল জসিম মাতুব্বরের খেলনার দোকান ছিল। আমি তার থেকে খেলনার মাল কিনে বিক্রি করতাম। একদিন জসিম মাতুব্বর বললো তিনি লিবিয়া লোক নেন! আমাকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে ছেলেকে লিবিয়া পাঠানোর জন্য বললেন। আমিও রাজি হয়ে দালাল জসিম মাতুব্বরকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে ছেলেকে লিবিয়া পাঠিয়েছি। পরে আমাকে তিনি বলেন লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠাবে আবার ৮ লাখ টাকা নেন তিনি। পরে দালালরা লিবিয়ার মাফিয়ার কাছে বিক্রি করে দেয় ছেলেকে। মাফিয়ারা আমার ছেলেকে জিম্মি করে রেখে নির্যাতন করে, সেই দৃশ্য মোবাইলের মাধ্যমে ভিডিও করে আমাদের কাছে পাঠায়। তা করুন দৃশ্য সহ্য করার মতো না। মাফিয়া সদস্যদের কাছ থেকে ছেলেকে ছাড়াতে দালাল জসিম মাতুব্বরের মাধ্যমে আরও দিয়েছি ১৪ লাখ টাকা। এই টাকা দিতে ফসলি জমি, বসতভিটা সব বিক্রি করেছি। সুদে ও ব্যাংক-এনজিও থেকে ঋণ করেছি। এখন আবার মাফিয়ারা ৬ লাখ টাকা চায়। সব শেষ এখন ৬ লাখ টাকা পাব কোথায়? আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। তা না হলে আমি বাঁচবো না!
স্থানীয় ইউপি সদস্য জসিম মৃধাসহ এলাকাবাসী জানায়, ভুল পথে দালালদের মাধ্যমে বিদেশ গিয়ে অসহায় পরিবারটি জমি, বসতভিটা সব বিক্রি করেছে। তাছাড়া সুদ ও এনজিওর কাছ থেকে ঋণ এনে এখন পরিশোধ করতে পারছেন না। তাই দলালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এ ছাড়া ভুক্তভোগী রফিক মিয়াকে ফিরিয়ে আনাসহ পরিবার যেন সব অর্থ ফেরত পায় তার দাবি জানাচ্ছি।
অভিযুক্ত দালাল জসিম মাতুব্বর বলেন, আমি রফিক মিয়াকে বিদেশ নেইনি। তবে আমার কাছে রফিক মিয়ার বাবা আইয়ুব আলী মোল্লা টাকা জমা রেখেছিলেন। কারণ তিনি আমার হকার ছিলেন। তারা এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমি কোনো দালাল না এবং কোনো মাফিয়ার সঙ্গেও জড়িত না।
জাজিরা থানার ওসি আল-আমিন বলেন, আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্রঃ ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি
এ ইউ/
Discussion about this post