ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় জোরালো হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে চালানো এই হামলায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অন্তত ৩৫৬ জন ফিলিস্তিনির নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে।
গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের বেশিরভাগই নারী, শিশু এবং বয়স্ক নাগরিক। এছাড়া ইসরায়েলি এই হামলায় গাজার উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং হামাসের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা মাহমুদ আবু ওয়াফাহ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) নিজেদের পৃথক লাইভ আপডেটে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আল জাজিরা।
কাতারভিত্তিক চ্যানেল আলজাজিরা তাদের সরাসরি সম্প্রচারিত আপডেটে জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটিয়েছে ইসরায়েল এবং এরপর অবরুদ্ধ এই উপত্যকা জুড়ে বিমান হামলা শুরু করেছে। বর্বর এই হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৫৬ জন ফিলিস্তিনির নিহত এবং অন্যান্য আরও অনেকের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নিহতদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে চিকিৎসা সূত্র। এখন পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চলেই প্রাণ হারিয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ।
এছাড়া বিবিসি জানিয়েছে, গাজার উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং হামাসের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কর্মকর্তা মাহমুদ আবু ওয়াফাহ এক হামলায় নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজায় এটিই সবচেয়ে বড় বিমান হামলা। মূলত যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর আলোচনা সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ার পরই এই হামলা শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, পবিত্র রমজান মাস হওয়ায় অনেক লোক সেহরি খাচ্ছিলেন, তখনই গাজায় হামলা ও বিস্ফোরণ শুরু হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ মঙ্গলবার সকালে হামলার নির্দেশ দিয়েছেন বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
গাজায় নারকীয় তাণ্ডব ইসরায়েলের, নিহত ছাড়িয়ে গেল ৩৪০
এতে বলা হয়, “আমাদের জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসের বারবার অস্বীকৃতি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূত স্টিভ উইটকফ ও মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে আসা সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের জবাবে এই হামলা চালানো হচ্ছে। ইসরায়েল এখন থেকে হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করবে।”
এদিকে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার বিষয়ে একটি নতুন বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতদের বেশিরভাগ হলেন নারী, শিশু এবং বয়স্ক মানুষ। এছাড়া হামলায় কিছু পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
মিডিয়া অফিস বলেছে, “ইসরায়েলি দখলদার সেনাবাহিনীর সংঘটিত এই নৃশংস গণহত্যা আবারও সেটাই নিশ্চিত করছে যে— এই দখলদার বাহিনী কেবল হত্যা, ধ্বংস এবং গণহত্যার ভাষা বোঝে।”
মিডিয়া অফিস বলেছে, “আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণের ইচ্ছাকে ধ্বংস করার একটি যুদ্ধ কৌশল হিসেবে এই হামলা চালানো হচ্ছে। তবুও, গাজার জনগণ এই তাণ্ডবলীলার কারণে ভীত হবে না এবং আমাদের ভূমি থেকে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের দৃঢ় এবং বৈধ সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।”
ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করে গাজায় হামলা করেছে ইসরায়েল: হোয়াইট হাউস
গাজার এই মিডিয়া অফিস জাতিসংঘ, মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং সাহায্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরায়েলের এই অপরাধের বিরোধিতা করার জন্য এবং ইসরায়েলি নেতাদের জবাবদিহি করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে— “বিশ্ব চুপ করে থাকতে পারে না”।
এম এইচ/
Discussion about this post