ডলার-সংকটের চরম মুহূর্তে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে আসছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। একইসঙ্গে পোশাকে ভর করে রপ্তানি আয়ও গত বছরের তুলনায় ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। এর ফলে ঈদকে ঘিরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভারে চাপ কিছুটা সহনীয় থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্সের প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে ২১৬ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি। ঈদ আসতে এখনো বেশ বাকি। এর আগেই রেমিট্যান্সের এ প্রবৃদ্ধির ধারা সামনে আরও বেগবান হবে বলেই মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অপর বড় খাত রপ্তানি আয়। এটিও খুব শক্তিশালী না হলেও প্রবৃদ্ধির ধারা ইতিবাচক রয়েছে। সর্বশেষ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্য বলছে, গত ফেব্রুয়ারিতে রেকর্ড রপ্তানি আয় হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে মোট রপ্তানি হয়েছে ৫১৮ কোটি ডলারের পণ্য। প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ০৪ শতাংশ।
রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার ধারা ফেব্রুয়ারিতে এসে বেশ গতি পেয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন বা ২১৬ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন। স্থানীয় মুদ্রায় বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী এই অর্থের পরিমাণ ২৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে আসা প্রবাসীদের এ আয় গত আট মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত জুন মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ২২০ কোটি ডলার। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স কখনো ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসে ২১০ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে প্রবাসীরা ১ হাজার ৫০৭ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন। গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৪১২ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল বলেন, বাজারে ডলারের দর বেশি হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে সমন্বয় করছে না। এটা জটিল সমস্যায় রূপ নিচ্ছে। ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে না দেওয়ায় হুন্ডিতে রেমিট্যান্স বেশি আসে। যেখানে রিজার্ভ ৬০ বিলিয়ন ডলার থাকার কথা, সেটি এখন ২৫ বিলিয়নও রাখা যাচ্ছে না। তবে হুন্ডি বন্ধের জন্য গভর্নরকে দারোগাগিরি করলে হবে না। তাত্ত্বিকভাবে হুন্ডি ঠেকানোর পথ বের করতে হবে। ডলারকে কৃত্রিমভাবে শক্তিশালী করে রাখা হয়েছে। এটা বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে।
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অপর বড় খাত হচ্ছে রপ্তানি খাত। এ খাতের আয় দিয়েই ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অঙ্ক বাড়ে। তবে প্রায় দুই বছর ধরে বৈশ্বিক অর্থনীতির শ্লথগতির কারণে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও থমকে রয়েছে। বিশ্ববাজারে মানুষ খাদ্যের চাহিদা পূরণের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়ায় পোশাকের চাহিদা কমে গেছে। এর ফলে চাপ পড়ে ডলার মজুতে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানির ধারা ইতিবাচক হওয়া শুরু হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় আশা জাগাচ্ছে।
ইপিবির সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের হিসাবে জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৮৪৫ কোটি ডলার। এটি আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ৭০৭ কোটি ডলার। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ফেব্রুয়ারিতে এত তৈরি পোশাক রপ্তানি হলো। ইপিবি তথ্যে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৫১৮ কোটি ডলার। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তা ছিল ৪৬৩ কোটি ডলার। ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। গত আট মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। বছর ব্যবধানে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হলেও এখনো লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি ইপিবি। গত আট মাসে স্ট্র্যাটেজিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম রপ্তানি হয়েছে, ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘আমাদের কারখানায় কাজ হচ্ছে। ক্রেতারাও খোঁজখবর করছেন। তবে ইপিবির তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে আরও পর্যালোচনা করা উচিত। রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকলেও এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিভিন্ন ইউটিলিটির বাড়তি খরচ। এখন সব মিলিয়ে ইউটিলিটির খরচ ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এটা সামনে পোশাক রপ্তানির খরচ বাড়িয়ে দেবে।
এফএস/
Discussion about this post