তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এর সাথে পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমদ মারুফ সাক্ষাৎ করেন।
আজ সচিবালয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অফিসকক্ষে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনার শুরুতে পাকিস্তান হাইকমিশনারকে কে সাক্ষাৎ করতে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান নাহিদ ইসলাম। পাকিস্তান হাইকমিশনার বলেন, পাকিস্তান সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করেন।
তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান দুদেশই খুব ভালো করছে। তাই এক্ষেত্রে উভয় দেশ যৌথ ভাবে কাজ করতে পারে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, উপনিবেশবাদবিরোধী লড়াই থেকে শুরু করে পাকিস্তান আন্দোলন পর্যন্ত বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের জনগণের দীর্ঘ ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে।
ইন্দো-মুসলিম সভ্যতার অংশ হিসেবে উপমহাদেশে বাংলাদেশ-পাকিস্থানের সাংস্কৃতিক ও সভ্যতাগত সম্পর্ক রয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক ও ভারসাম্যপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া গড়তে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার প্রয়োজন৷
মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবেও পাকিস্তানের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের গভীর বন্ধন রয়েছে। যদিও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বাংলাদেশকে বিশেষত্ব দিয়েছে।
পাকিস্তানি হাইকমিশনার বলেন, আমরা ১৯৭১ এর প্রশ্নটিকে সমাধান করতে চাই। কিন্তু গত সরকার আমাদেরকে আলোচনার কোনো সুযোগ দেয়নি এবং ইচ্ছে করেই ৭১ ইস্যুটাকে জিইয়ে রাখতো। চাইলে বহু আগেই এটির সমাধান করা যেতো। আমরা বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী।
নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৭১ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আওয়ামী লীগের আদর্শে ১৯৭১ ছিল ‘ইতিহাসের শেষ অধ্যায়’। কিন্তু আমরা মনে করি এটি ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। ১৯৪৭ বা পাকিস্তান আন্দোলন ছাড়া বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হতো না। আমরা পাকিস্তানের সাথে ৭১ এর প্রশ্নটিকে সমাধান করতে চাই। একটি গণতান্ত্রিক দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আমাদের পরস্পরের সাথে সম্পর্ক মজবুত করা প্রয়োজন। আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রেখে যেকোনো দেশের সাথে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানি চ্যানেল দেখা যায় না সে বিষয়ে হাইকমিশনার উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
পাকিস্তান হাইকমিশনার বন্যা দুর্গতদের জন্য সহযোগিতার প্রস্তাব দিলে উপদেষ্টা বলেন বর্তমানে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আপাতত সাহায্যের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হলে তখন জানানো হবে।
হাইকমিশনার বলেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে গত ১৫ বছর তাদের নানা ভাবে হয়রানি করা হয়েছে বিশেষ করে ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে এবং এয়ারপোর্টে। এ সমস্যা সমাধানে তিনি উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় স্বার্থে আমরা একাত্তরের বিষয়গুলো সমাধান করে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী।
বৈঠকে মিডিয়া, ক্রীড়া, যুব ও সংস্কৃতি এবং তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
হাইকমিশনার পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট বিজয়ে অভিনন্দন জানান এবং সিরিজ হেরে যাবেন বলেও আশঙ্কা করেন।
সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগে এবং পাকিস্তান হাইকমিশনের উদ্যোগে কাওয়ালী গানের আয়োজন করা হচ্ছে সেখানে উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানান হাইকমিশনার।
পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে আলোচনা শেষ হয়।সাক্ষাৎকার কাউন্সিলর কামরান দাঙ্গাল, বাণিজ্যিক কর্মকর্তা জায়িন আজিজ এবং ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
টিবি
Discussion about this post