ফের লাগাতার দরপতনের কবলে শেয়ারবাজার। লাগাতার বড় দরপতনের আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করছেন বিনিয়োগকারীরা। ভালো বা মন্দ, সব ধরনের শেয়ার দরপতনের কবলে। আগের ছয় কার্যদিবসের মধ্যে পাঁচদিনের দরপতনের ধারাবাহিকতায় আজ বুধবারও লেনদেন শুরু হয়েছে দরপতনে।
সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর এক ঘণ্টা না পেরোতোই শতাধিক শেয়ার ক্রেতা শূন্য হয়েছিল। তবে ক্রেতা শূন্য শেয়ারগুলোর অধিকাংশই দুর্বল মৌলভিত্তির। দরপতনে প্রথম ঘণ্টাতেই দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ৬৬ পয়েন্ট হারিয়েছে, নেমেছে ৫৫১৯ পয়েন্টে। সূচক পতনের হার ১ দশমিক ১৯ শতাংশ।
আজ সর্বশেষ ছয় কার্যদিবসের মধ্যে পাঁচ দিনের দরপতনে সূচকটি ১৪৪ পয়েন্ট হারিয়েছিল। এর মধ্যে গতকালই হারিয়েছিল ৮১ পয়েন্ট। প্রথম ঘণ্টায় এ বাজারে ১৫৩ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা গতকাল একই সময়ে ছিল ২৮১ কোটি টাকা।
বেলা ১১টায় ডিএসইর লেনদেন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এ সময় পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ৩৯৬ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে লেনদেনে আসা ৩৮০টির মধ্যে ৩১৬টি দর হারিয়ে কেনাবেচা হচ্ছিল। যা লেনদেন আসা মোট শেয়ারের ৮৩ শতাংশ। বিপরীতে মাত্র ২৭ শেয়ার দর বেড়ে কেনাবেচা হচ্ছিল। দর অপরিবর্তিত অবস্থায় কেনাবেচা হচ্ছিল ৩৭টি শেয়ার।
তবে দরপতন ঠেকাতে নানা তৎপরতা শুরু করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এতে দরপতন কিছুটা কমার প্রবণতা দেখা গেছে। এই দরপতনের কোনো কারণ জানা নেই বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম।
তবে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ১৩ বিলিয়নের ঘরে নেমেছে, প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ কত, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজে থেকে কোনো তথ্য প্রকাশ করছে না- গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশের নেতিবাচক প্রভাব এটি।
এর মধ্যে ফের বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাক হয়েছে মর্মে- মঙ্গলবার ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছে। এ খবরেরও একটি নেতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়ছে বলে অনুমান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউসের সিইও। তিনি জানান, ভারতীয় গণমাধ্যমটির খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি এই হ্যাকের ঘটা ঘটেছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে। যদিও গতকালই বাংলাদেশ ব্যাংক এ খবরকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
ব্রোকোরেজ হাউসের কর্মকর্তারা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমলে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যার প্রভাব পড়বে তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয় ও মুনাফায়।
এমন ভাবনা থেকে সর্তকতা হিসেবে বিনিয়োগকারীদের একটা অংশ বিনিয়োগে সর্তকতা অবলম্বন করছেন বলে মনে হচ্ছে। অনেকে আবার দরপতন দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা করে আগাম শেয়ার বিক্রি করছেন। এতে দরপতন বাড়ছে বলে অনুমান ওই ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তার।
এর মধ্যে যেসব বিনিয়োগকারী মার্জিন ঋণে শেয়ার কিনেছেন এবং দরপতনের পর আইন অনুযায়ী মার্জিন ঋণের হার সমন্বয়ে ঋণদাতা ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের অনুমোদনের পরও নগদ অর্থ জমা না দিয়ে তা সমন্বয় করেছেন না, সেসব বিনিয়োগকারীদের শেয়ার প্রয়োজন অনুযায়ী ফোর্স সেল হচ্ছে। এতেও দরপতন বাড়ছে।
সূত্র – সমকাল
এ এস/
Discussion about this post