মাহবুবউল-আলম হানিফ, ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। কাগজ-কলমে পেশা তাঁর ব্যবসা। সেটাই ছিল আয়ের একমাত্র উৎস। মাত্র ১৫ বছর আগে সে খাতে তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। মাসের হিসাবে তা দাঁড়ায় ২০ হাজার টাকা। ব্যয় দেখিয়েছিলেন দুই লাখ ১৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ বাড়তি খরচ, বিপদ-আপদ না হলে বছরে তাঁর সঞ্চয় হওয়া সম্ভব ২৫ হাজার টাকা। তাঁর ছিল না কোনো নিজস্ব বাড়ি বা ফ্ল্যাট। ছিল না কোনো কৃষি বা অকৃষি জমি। কোনো কোম্পানিতে ছিল না শেয়ার। ব্যাংকে ছিল না একটি টাকাও।
শুধু স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে ছিল রাজধানীর নয়াপল্টনে আট লাখ টাকা মূল্যের একটি অফিস স্পেস।
পেশা এখনও তাঁর আগের মতোই। কিন্তু আয় মাসে ৩০ লাখ টাকার বেশি। গাজীপুরে কিনেছেন ৩ একর অকৃষি জমি। রাজধানীর গুলশানে ৫ কাঠা ৯ ছটাকের প্লট, কুষ্টিয়ায় ১২ শতাংশ জমির ওপর রয়েছে ৩ তলা ভবন। আরও রয়েছে ছয়টি কোম্পানির শেয়ার। দামি দামি গাড়ি আছে তিনটি। হাতে নগদ থাকা ৩৬ লাখ টাকা বেড়ে হয়েছে ২ কোটি। অনুমোদন নিয়ে ৩টি অস্ত্রও এখন আছে তাঁর।
এসব তথ্য হলফনামা আকারে তাঁরই প্রকাশ করা। কিন্তু অনুসন্ধানে দেশ-বিদেশে মিলেছে আরও অনেক গোপন সম্পদের খোঁজ। বাংলাদেশ ছাড়াও তিনি কানাডার নাগরিক। উঠে এসেছে এমন বিস্ফোরক তথ্যও।
দ্বৈত নাগরিক হিসেবে সংসদ সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বিধিনিষেধ থাকলেও তিনি কানাডার নাগরিকত্বের তথ্য গোপন করে এমপি হয়েছেন তিনবার। করোনাকালে মাহবুবউল-আলম হানিফ একবার কানাডা যান। সেসময় ইউরোপ-আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলোর বিমানবন্দরে যাত্রীদের আসা যাওয়ায় ছিল ব্যাপক কড়াকড়ি। এমনকি কানাডার পক্ষ থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের ছাড়া অন্য কোনো নাগরিককে তাদের দেশে ঢোকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ঠিক এমন সময় হানিফ কি করে কানাডা গেলেন সে প্রশ্ন থেকে তাঁর কানাডার নাগরিকত্বের বিষয়টি সামনে আসে। যদিও হানিফ কখনোই তাঁর দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়টি স্বীকার করেননি। তবে কানাডায় তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলের স্থায়ীভাবে বসবাসের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন।
হানিফের স্ত্রী দুই ছেলে নিয়ে কানাডার বেগমপাড়া হিসেবে পরিচিত নর্থ ইয়র্কের ‘বে ভিউ ভিলেজ’ এলাকায় বসবাস করেন। টরন্টোয় হানিফের বেশ কয়েকটি বাড়ি আছে বলে গুঞ্জন থাকলেও তিনি বরাবরই সেটি উড়িয়ে দিয়েছেন। এছাড়া জানা গেছে, কানাডায় তিনি ভাই ও বোনের নামে সম্পদ করেছেন। এর মধ্যে হানিফের টাকায় সে দেশে একটি গ্যাস স্টেশন করেছেন তাঁর ভাই। সেখানে বাড়িও আছে বোন ও ভাইয়ের নামে। বোনের স্বামীও হানিফের টাকায় নানা ব্যবসা করেন বলে জানা গেছে।
সূত্র: সমকাল
এস আর/
Discussion about this post