বৈশ্বিক জলবায়ু তে সমতা আনতে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে চায় জাপান। গতকাল সোমবার থেকে জাপানের রাজধানী টোকিওতে আয়োজিত তিন দিনের আন্তর্জাতিক জ্বালানি সামিটের প্রথম দিনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানটিতে জানানো হয়, জলবায়ুর পরিবর্তনে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় কার্বন দূষণ কমানোর পাশাপাশি সাশ্রয়ী হতে হবে। সেজন্য জ্বালানির বহুমুখী ব্যবহার বাড়ানো এবং আধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবনের বিকল্প নেই। পাশাপাশি প্রযুক্তি ও আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে এশিয়াকেও এই কাজে নেতৃত্ব দিতে চায় জাপান। ইতিমধ্যে এশিয়া জিরো এমিশন কমিউনিটির (এজেডইসি) সদস্য ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস, সিঙ্গাপুর, কম্বোডিয়া, ব্রুনাই, মিয়ানমার ও লাওসের সঙ্গে জাপান নানা ধরনের সহযোগিতায় যুক্ত হয়েছে।
টোকিও শহরের বিগ সাইটে আয়োজিত এই আসরে ভবিষ্যৎ জ্বালানি এবং পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এলএনজি, গ্যাস, হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি ফুরিয়ে আসছে। তা ছাড়া এটি পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বহুমুখী জ্বালানির ব্যবহারের বিকল্প নেই।
সামিটের প্রথম দিন সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার প্রাক্তন নির্বাহী পরিচালক নোবুও তানাকা টেকসই শক্তি লক্ষ্য অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, কার্বন দূষণ কমাতে যুক্তরাষ্ট্র পরিবেশবান্ধব জ্বালানি প্রসারে বিপুল ভর্তুকি দিচ্ছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও সবুজ জ্বালানির জন্য নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে। ভারত ও চীন নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়ায় দেশ দুটি এতে বেশ সাফল্য দেখিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউ) জ্বালানিবিষয়ক কমিশনার কাদরি সিমসন তার বক্তৃতায় বলেন, রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাতে ইউরোপ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর বিশেষ জোর দিয়েছে। গত বছর ইউ গ্যাসের চেয়ে বায়ুশক্তি থেকে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি নিরাপত্তাকাঠামো গঠনে জাপানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে এলএনজির ক্ষেত্রে জাপান বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের কার্বন নিরপেক্ষতাবিষয়ক আন্তর্জাতিক নীতির মহাপরিচালক শিনিচি কিহারা তার উপস্থাপনায় বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে জাপান নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। তারা ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যতে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ২০২৮ সাল থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ওপর কর আরোপ করা হবে বলে জানান কিহারা। তিনি বলেন, বায়ুশক্তি থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে জাপান ১০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়। পাশাপাশি হাইড্রোজেনসহ দূষণমুক্ত জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
কিহারা আরও বলেন, জাপান শুধু নিজেকেই দূষণমুক্ত করতে চায় না, পাশাপাশি এশিয়াকেওনেতৃত্ব দিতে চায়। এজন্য এজেডইসিভুক্ত ১০ দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে জাপান। দূষণ কমাতে এই দেশগুলোকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও আর্থিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।তিন দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন কারিগরি সেমিনার, ব্যবসায়িক আলোচনা হবে। আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনীতে শেভরন, জেরা, এক্সন মবিল, হিটাচি, পেট্রোনাস, টোটাল এনার্জিস, বিপি সিঙ্গাপুর, ইনপেক্স, এডনক, কারাকেনটেক, এনজি, জাপান এনআরজি, উড ম্যাকেঞ্জি, ভরটেক্সসহ বিভিন্ন কোম্পানি অংশ নিয়েছে।
প্রদর্শনী ঘুরে দেখা গেছে, কোম্পানিগুলো নিজ নিজ পরিবেশবান্ধব যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি নিয়ে মেলায় হাজির হয়েছে। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও উদ্যোক্তাদের এসব উদ্ভাবনী প্রযুক্তি সম্পর্কে হাতে-কলমে জ্ঞান নিতে দেখা গেছে।
এস এম
Discussion about this post