সাভারের আশুলিয়ায় একটি এনজিও’র বকেয়া কিস্তির টাকা পরিশোধ না করার মামলায় দুই শিশুসহ তার মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার সকালে মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত ওই নারীকে ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার রাতভর আশুলিয়া থানা হেফাজতে শীতের মধ্যে দুই শিশুসহ ওই নারীকে আটক রাখার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত নারীর নাম হানিয়া বেগম। তিনি আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুত এলাকার মনির হোসেনের স্ত্রী। তাদের মোঃ রায়হান নামে আড়াই বছরের এবং মাশরাফ নামে ১৪ মাস বয়সের দুটি শিশু সন্তান রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে গ্রেপ্তারকৃত নারীর স্বামী মনির হোসেন দি ঢাকা মার্কেটাইল ব্যাংক কো-অপারেটিভ লিমিটেড নামক একটি এনজিও’র পল্লীবিদ্যুৎ শাখা থেকে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ঋণ নেন। পরবর্তীতে ঋণের ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও প্রায় ১ লাখ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন মনির। এঘটনায় এনজিও কর্তৃপক্ষ ঋণ গ্রহীতা মনির হোসেনের স্ত্রী হানিয়া বেগমকে আসামি করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ বুধবার রাতে হানিয়া বেগমকে আড়াই বছরের রায়হান ও ১৪ মাস বয়সের সন্তান মাশরাফকেসহ তাকে থানায় নিয়ে আসে। গভীর রাত পর্যন্ত থানার ভিতর একটি কক্ষে আটক ওই নারীর শিশু সন্তানেরা কান্না করছিলো।
পুলিশ হেফাজতে থাকা হানিয়া বেগম নামে ওই নারী বলেন, ‘আমি জানি না, কেন তারা আমাকে গ্রেপ্তার করেছে। শুধু শুনেছি, আমার স্বামী না কি কিস্তি দিতে পারে নাই। তাই তারা আমার নামে মামলা দিয়েছে। অথচ আমি কোন এনজিও থেকে টাকাই তুলিনি। তারা স্বামীকে কিছু না বলে, আমাকে ধরে এনেছে।
গ্রেপ্তারকৃত নারীর স্বামী ঋণ গ্রহীতা মনির হোসেন বলেন, ‘ঋণ নিয়েছি আমি, আমাকে গ্রেপ্তার না করে তারা আমার স্ত্রী-সন্তানকে থানায় নিয়ে আসছে। ছোট্ট ব্যবসা করতাম লোকসানের মুখে পড়ায় কিস্তি দিতে কিছুটা দেরি হচ্ছে।
গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া আশুলিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, হানিয়া বেগমের নামে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় তাকে আটক করা হয়েছে। সঙ্গে তার দুই শিশু সন্তানও রয়েছে। তারা বুকের দুধ খায় তাই রেখে আসতে পারিনি।
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে সুশীল সমাজসহ খোদ পুলিশ সদস্যরাও বিষয়টি সম্পর্কে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশুলিয়া থানার এক উপ-পরিদর্শক বলেন, ‘ছোট ছোট বাচ্চা দুটিকে নিয়ে আসা ঠিক হয়নি। সারারাত শীতে কষ্ট করেছে, কান্নাকাটি করেছে। হয় তাকে আদালতে জামিন হতে বলে চলে আসা, না হয় বাচ্চা দুটিকে কোন আত্মীয়ের কাছে রেখে আসা উচিত ছিল। এখন যে কেউ বাচ্চা দুটিকে দেখলে পুলিশের বিরুদ্ধে খারাপ ধারণা সৃষ্টি হবে।
বিষয়টি নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক কমিটির ঢাকা বিভাগের সমন্বয়কারী জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এই শীতে বাচ্চা দুটিকে থানায় রাখা অমানবিক। পুলিশ ইচ্ছে করলে বাচ্চা দুটিকে আরো ভালো সুরক্ষা দিতে পারতো। কারণ ওসির অনেক দায়িত্ব ছিল। ওই নারীতো আর হত্যা কিংবা বড় কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত না।
আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, একটি মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ওই নারীকে বুধবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এ ইউ/
Discussion about this post