বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকায় ঝুম বৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশেই প্রায় একই অবস্থা। আবহাওয়া অফিস বলছে, সারাদিন থেমে থেমে এমন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।
এই আবহাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ইতোমধ্যে তিন নম্বর এবং দেশের সকল নদীবন্দরগুলোকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সকালে চেষ্টা এই সতর্ক সংকেত তুলে নেওয়ার ভাবনা ছিল; কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূল না থাকায় তোলা যায়নি।”
তবে তিনি আশা করছেন, আজ বিকালের পর এই সতর্ক সংকেত তুলে নেওয়া হতে পারে।
কী কারণে হচ্ছে এত বৃষ্টি
গেল মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের একটি সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছিল। তখন বলা হয়, ওইদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা, অর্থাৎ আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে “মোটামুটি ভারী থেকে অতি ভারী” বর্ষণ হতে পারে। সেইসঙ্গে, তার দুদিন আগে সমুদ্রে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার কথাও বলেছে অধিদপ্তর।
এ কে এম নাজমুল হক বলেন, ‘সমুদ্রে লঘুচাপ তৈরি হয়, গত ২২ সেপ্টেম্বর। পরবর্তীতে এটি ভারতের ভেতরে প্রবেশ করে। কিন্তু বাংলাদেশে কনভিক্টিভ ক্লাউড বা পুঞ্জীভূত মেঘ তৈরি অব্যাহত থাকে।
পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তার আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং মৌসুমী বায়ুর অক্ষের সাথে মিলিত হয়েছে।
এ কে এম নাজমুল হক আরও বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় অবস্থায় আছে। লঘুচাপ ও সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর মিলিত হওয়ার প্রভাবেই ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে দেশে।
এদিকে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শঙ্কা কেটে যাওয়ায় দেশের ৪ সমুদ্রবন্দর থেকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) আবহাওয়ার সামুদ্রিক সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিকের সই করা ওই সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।
এর আগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শঙ্কায় বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দেশের ৪ সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত থাকায় ঝড়ের শঙ্কায় এই সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছিল।
বৃষ্টিপাত কমবে কবে
বিকাল নাগাদ সমুদ্র ও নদীবন্দরের সতর্ক সংকেত তুলে নেওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছে আবহাওয়া অফিস; কারণ আজ সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমতে পারে।
আগামীকাল শুক্রবার থেকে বৃষ্টিপাত আরও কমে আসবে। তারপর তাপমাত্রা বাড়তির দিকে যাবে, বলছিলেন আবহাওয়াবিদ মি. হক।
তবে গত কয়েকদিন ধরে যে মাত্রায় গরম পড়ছিলো, ততটা গরম পড়বে না বলে জানান তিনি।
এখানে উল্লেখ্য, সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেওয়ার অর্থ হলো, বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার হতে পারে।
সেক্ষেত্রে বন্দরের নৌযানগুলোর দুর্যোগ কবলিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অনূর্ধ্ব ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যের নৌযান, মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতি দ্রুত নিরাপদ আশ্রয় নিতে হবে।
আবহাওয়ার নতুন সতর্ক সংকেত দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী, নদীবন্দরের জন্য এক ও দুই নম্বর সতর্ক সংকেত নেই। কিন্তু বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির জন্য দৃষ্টিগ্রাহ্যতা কমে গেলে নদীর নৌযানগুলোকে সাবধানে চলাচল করার উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে এমন সতর্কবার্তা ঘোষণা করা হয়।
এ ইউ/
Discussion about this post