মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া বহুগুণে সমৃদ্ধ বরকতময় নেয়ামতের পানি জমজম। দুনিয়ায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যত বিস্ময়কর নিদর্শন রয়েছে জমজম কূপ তার একটি। পবিত্রতা ও বৈশিষ্ট্যে জমজম কূপের পানি পৃথিবীর সকল পানির চেয়ে উত্তম। পবিত্র কাবা ও এই কূপের মধ্যে দূরত্ব হলো মাত্র ৩৮ গজের। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে পবিত্র কাবা ঘরের কাছে এ মহা বরকতময় কূপটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল।
ইসলামের ইতিহাস বলছে, হজরত হাজেরা (আ.) এবং শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কাবার পাশে বড় একটি গাছের ছায়ায় রেখে গিয়েছিলেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। তাঁদের দিয়ে গিয়েছিলেন কিছু খেজুর আর এক পট পানি। কাবা শরিফের জায়গাটি তখন ছিল উঁচু একটি টিলার মতো। পানি ফুরিয়ে গেলে হজরত হাজেরা (আ.) পানির জন্য কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় ছোটাছুটি করতে থাকেন। সাতবার ছোটাছুটির পর একটি আওয়াজ শুনে তিনি কাবার পাশে এসে দেখেন, চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে পানি। সাথে সাথে চারদিকে বালুর বাঁধ দেন। পরে খনন করে এ কূপকে আরও প্রশস্ত করেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। সেই কুদরতি পানির ঝরনাধারাটিই হচ্ছে জমজম কূপ।
সাধারণত যারা পবিত্র মক্কা-মদিনায় হজ ও ওমরা করতে যান তারা আর কিছু না হোক অন্তত জমজম কূপের পানি নিয়ে দেশে ফেরেন। হাদিসে বর্নিত আছে- তৃপ্তি সহকারে জমজমের পানি পান করা ঈমানের বহিঃপ্রকাশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন ,জমজমের পানি যে উদ্দেশ্য নিয়ে পান করবে তা পূরণ হবে। জমজমের অশেষ কল্যাণ ও বরকতের কথা অনেক হাদিসে উঠে এসেছে। হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) জমজমের পানি সম্পর্কে বলেছেন যে, জমজমের পানি হচ্ছে বরকতময় ও তৃপ্তিদায়ক।’ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, পৃথিবীর সর্বোত্তম পানি হচ্ছে জমজমের পানি।’
ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায়, মহানবী নিজ হাতে জমজমের পানি উত্তোলন করতেন এবং পান করতেন। সৌদি সরকার জানায়, অলৌকিক এই কূপ থেকে ভারী মোটরের সাহায্যে ঘণ্টায় প্রায় আট হাজার লিটার পানি উত্তোলন করা হয়। অর্থাৎ দিনে পানি তোলা হয়, প্রায় ৭০ কোটি লিটার । এরপরও এই কূপ থেকে এক ফোটাও কমছে না পানি। অনেকে বলে থাকেন, এটি আল্লাহর মহা কুদরত।
জানা যায়, জমজমের মুখ থেকে প্রায় ৪০ হাত গভীর পর্যন্ত প্লাস্টার করা। তার নিচে পাথরকাটা অংশ আছে আরও প্রায় ২৯ হাত। এসব লাল পাথরের ফাঁক দিয়ে তিনটি প্রবাহ থেকে আসে পানি। একটি কাবার দিক থেকে, একটি সাফা পাহাড়ের দিক থেকে, আরেকটি মারওয়া পাহাড়ের দিক থেকে। এই পানিতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সল্টের পরিমাণ বেশি, তাই তা শুধু পিপাসাই মেটায় না বরং ক্ষুধাও নিবারণ করে। বর্নিত আছে, হযরত আবুযর গিফারি (রা) একবার টানা ৩০ দিন এই পানি পান করে জীবনধারণ করেছিলেন।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত , ‘জমজমের এ পানি দাঁড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে তিন নিঃশ্বাসে পান করা সুন্নাত। রাসুল (সা.) বলেছিলেন, অসুস্থতা থেকে এটি আরোগ্য দেয়। জমজম কূপের পানি এমন একটি উপাদান যা কখনো জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হয়নি।
Discussion about this post