অনেকেই তাকে রহস্য মানব বলে ডাকেন। তার নামের মধ্যেও রয়েছে একধরণের রহস্য। নামের সঙ্গে ‘ভাই’ শব্দটি থাকার কারণে অনেকেই আবার তাকে গডফাদার মনে করেন। বলছিলাম দেশের আলোচিত রহস্য মানব হিসেবে পরিচিত আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের কথা।
নব্বই দশকের চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিনজনের যাবজ্জীবন দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্তী এ রায় ঘোষণা করেন।
আজিজ মোহাম্মাদ ভাই একজন ব্যবসায়ী। অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিটিউক্যাল, এমবি ফিল্মের মতো প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। এছাড়াও মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট ব্যাবসা। এসবের পাশাপাশি প্রায় ৫০ চলচ্চিত্রও প্রযোজনা করেছেন তিনি। আবার মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
নব্বই দশকে সিনেমায় অর্থলগ্নির সুবাদে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সাথে নায়ক সালমান শাহ’র পরিবারের সখ্যতা গড়ে উঠে। জনশ্রুতি আছে, সেসময় একটি পার্টিতে নায়ক সালমান শাহ স্ত্রী সামিরা চৌধুরীসহ উপস্থিত ছিলেন। সেই পার্টির এক পর্যায়ে সালমানের স্ত্রী সামিরাকে চুমু খেতে চান আজিজ মোহাম্মদ। ওই সময় সালমান ক্ষিপ্ত হয়ে আজিজ মোহাম্মদকে চড় মারেন। এর এক সপ্তাহ পর রহস্যজনক মৃত্যু হয় সালমান শাহ’র। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলা হলেও গুঞ্জন ওঠে এটি একটি হত্যাকাণ্ড। তখনই চড় দেয়ার ব্যাপারটি আলোচিত হয়। ধারণা করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ হয়তো সালমানের মৃত্যুর সাথে কোনোভাবে জড়িত।
সালমান শাহ মৃত্যুর বছরখানেকের ব্যবধানে গুলিতে নিহত হন ঢাকায় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় আরেক নায়ক সোহেল চৌধুরী। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্বাক্ষীদের জবানবন্দিতে স্পষ্ট হয়েছিলো আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের নির্দেশে হত্যা করা হয়েছিলো নায়ক সোহেল চৌধুরীকে। বনানীর আবেদিন টাওয়ারে টাম্প ক্লাবে ১৯৯৮ সালের আগে কথিত এক বান্ধবীকে নিয়ে ওই ক্লাবের মধ্যে সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের কথা কাটাকাটি হয়। তখন উত্তেজিত হয়ে সোহেল ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গালিগালাজ করেন। তার প্রতিশোধ হিসেবেই হত্যা করা হয় সোহেলকে, এমনটাই উঠে আসে মামলার তদন্তে ।
চলচ্চিত্র নায়িকাসহ বিভিন্ন নারীর সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এর সম্পর্ক নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প আছে। এরশাদের আমলে একবার তিনি গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন নারী কেলেঙ্কারি ইস্যুতে।
বর্তমানে আজিজ মোহাম্মদ ভাই সপরিবারে থাইল্যান্ডে থাকেন। সেখান থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। তার স্ত্রী নওরিন মোহাম্মদ ভাই দেশে এসে ব্যবসা দেখেন। পরিবারে আর আছে ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে।
টিবি
Discussion about this post