বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় খুলনা মহানরগীর অধিকাংশ এলাকা। সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়, জেলা পরিষদ ও খুলনার শেরে বাংলা রোডে প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই তথা দুই এমপির বাড়িতে। ভাঙচুর করা হয় খুলনা প্রেসক্লাবসহ বেশ কিছু স্থাপনা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রোববার (৪ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে নগরীর শিববাড়ি মোড় চত্বরে অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রছাত্রীরা। শিববাড়ি চত্বরে ছাত্রছাত্রীরা স্বাভাবিকভাবেই অবস্থান করতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ খুলনার লোয়ার যশোর রোড হয়ে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদেরকে ধাওয়া দেন। ধাওয়া খেয়ে ছাত্ররা একটু পিছিয়ে এসে অবস্থান নেন পিকচার প্যালেস মোড় এলাকায়।
এ সময় শিববাড়ি থেকে ছাত্রদের একটি অংশ এসে সেখানে যোগ দেন। এরপর শুরু হয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছাত্রদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে তাদের (আওয়ামী লীগের) কার্যালয় দখলে নিয়ে সেখানে ভাঙচুর করেন এবং আগুন ধরিয়ে দেন। ছাত্রদের ধাওয়া খেয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে ছাত্ররা বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশের সড়কে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন। একই সময়ে ছাত্ররা খুলনা জেলা পরিষদে হামলা চালান। সেখানে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন তারা। পরে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরে আন্দোলনকারীরা মিছিল সহকারে সেখান থেকে গিয়ে মহানগরীর শেরে বাংলা রোডের প্রধানমন্ত্রীর চাচা শেখ আবু নাসেরের বাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় বাড়ির ভেতর থেকে গুলিবর্ষণ করলে আন্দোলনকারীরা ভেতরে ঢুকে আগুন লাগিয়ে দেন। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সময় তাদের বাড়ির সামনে কোনো পুলিশ সদস্য বা নেতাকর্মী ছিলেন না।
একপর্যায়ে তারা গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালান এবং ভবনের প্রতিটি তলায় আগুন ধরিয়ে দেন। পরে স্থানীয়রা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
বিকেল পৌনে তিনটার দিকে আগুন নিভে গেলে বেশ কিছু পুলিশ ও এপিবিএনের সদস্যরা বাড়িতে যান। পরে যুবলীগের কিছু নেতাকর্মীকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাড়ির সামনে আসতে দেখা যায়। তবে কিছুক্ষণ পর তারাও চলে যান।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরের এই বাড়িতে বর্তমানে শেখ সোহেল ও তার ভাই শেখ রুবেলই থাকেন। তাদের অপর দুই ভাই সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল ঢাকায় থাকেন। তবে হামলা অগ্নিসংযোগকালে তারা কেউ বাড়িতে ছিলেন না।
টিবি
Discussion about this post