দেশের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে একই দিনে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাসহ দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশবাসী যখন বিমূঢ়, ঠিক তখন চট্টগ্রামে আরেক যুবককে নৃশংসভাবে হত্যার তথ্য জানা গেছে। তবে এবার ভাত খাইয়ে নয়, ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গানটি গেয়ে গেয়ে কিছু যুবক ২৪ বছর বয়সী শাহাদাত হোসেন নামে এক যুবককে দুই হাত বেঁধে মারধর করে হত্যা করেছে। ঘটনাটি গত ১৪ আগস্টের হলেও জানাজানি হয়েছে গত শনিবার।
পুলিশ জানায়, গত ১৪ আগস্ট নগরের ২ নম্বর গেট এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যার পর তার লাশ ফেলে রাখা হয়েছিল নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বেসরকারি একটি হাসপাতালের সামনের রাস্তায়।
এ ঘটনায় পরদিন পাঁচলাইশ থানায় নিহতের চাচা মোহাম্মদ হারুন অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে মামলা করেন। কিন্তু সে সময় বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। শাহাদাতকে মারধরের দৃশ্যের একটি ভিডিও ক্লিপ গত শনিবার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর নড়েচড়ে বসে নগর পুলিশ প্রশাসন।
জানা গেছে, নিহত শাহাদাত হোসেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়া জান ভূঁইয়া বাড়ির ছেলে। থাকতেন চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানাধীন বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে।
মামলার বাদী জানান, শাহাদাত বিআরটিসি এলাকার ফলম-ীতে কাজ করতেন। দুই বছর আগে শারমীন আক্তার নামে এক নারীকে বিয়ে করেন।
মামলার এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, গত ১৩ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার মোবাইল ফোনে কল করলে কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় চলে আসবেন বলে স্ত্রীকে জানান। কিন্তু গভীর রাত পর্যন্ত স্বামী বাসায় ফিরে না আসায় খোঁজাখুঁজি করেন শারমীন। এ সময় শাহাদাতের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ১৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফেসবুকে বাদী দেখতে পান, নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনাশাহ মিয়া (রহ.) মাজারের বিপরীতে সড়কের পাশে তার ভাতিজা শাহাদাত হোসেনের মৃতদেহ পড়ে আছে।
এর আগে রাত ৯টার দিকে খবর পেয়ে নগরের পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শাহাদাতের নিথর দেহ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
ওইদিন রাতেই চমেক হাসপাতালে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে শাহাদাতের লাশ শনাক্ত করেন তার স্ত্রী শারমীন এবং মামলার বাদী হারুন। সেদিন রাতে মৃত অবস্থায় শাহাদাতকে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন বাদী।
পুলিশ জানায়, চমেক হাসপাতালে মৃত ঘোষণার পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য শাহাদাতের লাশ চমেকের ফরেনসিক মর্গে পাঠানো হয়। সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, শাহাদাতের মাথা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বাদীর ধারণা, আসামিরা তার ভাতিজাকে মারধরের পর শ্বাসরোধে হত্যা করেছে।
এ প্রসঙ্গে নগর পুলিশের মুখপাত্র উপকমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ রইছ উদ্দিন গতকাল রবিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত ২১ সেপ্টেম্বর এক যুবককে দুই হাত বেঁধে গান গেয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু জনতার মারধরের একটি ভিডিও আমাদের নজরে আসে। সেই ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে জানতে পারি, মারধরের শিকার হতভাগ্য যুবকটিই শাহাদাত হোসেন। আমরা তার (শাহাদাত হোসেন) স্ত্রীকে থানায় ডেকে পাঠাই। থানায় এলে ওই ভিডিও তাকে দেখানো হলে ভিডিও চিত্রে দেখা যাওয়া যুবকটি তার স্বামী বলে শনাক্ত করেন।’
ঘটনাটি অমানবিক এবং বর্বরতা বলে মন্তব্য করে সিএমপির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘শাহাদাতকে মারধরকারীদের শনাক্ত করে তাদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।’
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শাহাদাতের দুই হাত দুই পাশে স্টিলের পাইপের সঙ্গে বেঁধে কিছু যুবক গান গেয়ে গেয়ে মারধর করছে।
এ ইউ/
Discussion about this post