২০২৫-২৬ অর্থবছরের ঘাটতি বাজেট মেটাতে দেশি ও বৈদেশিক উৎসের ঋণের দিকে নজর সরকারের। আগামী বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এক্ষেত্রে বৈদেশিক উৎস থেকে সংস্থান করা হবে ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর বাজেট ঘাটতি ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। সে সময় সরকার বিদেশি উৎস থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেয় ১ লাখ ৬১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা করেছে। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে লক্ষ্য ধরা হয় ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বের শুরুর দিকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ ছিল খুব সামান্য। দিন যত যাচ্ছে, ঋণ বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের ২১ মে পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা।
গত জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থবছরের ৭ মাসে যেখানে ছিল মাত্র ১৩ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়া, সঞ্চয়পত্রে ঋণ না বেড়ে উল্টো কমে যাওয়া এবং বিদেশি উৎস থেকে ঋণ ছাড় কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে শেষ সময়ে ব্যাংক ঋণ বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (২ জুন) বিকেলে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সেখানে এসব কথা বলেন তিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এবারের বাজেটটি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, যা পূর্ববর্তী বছরগুলোর বাজেটের তুলনায় ভিন্ন। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার ঘটনা।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩.৬২%। এই ঘাটতি পূরণে সরকার বৈদেশিক ঋণ, ব্যাংক ঋণ এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করবে।
অর্থ-উপদেষ্ট ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাত্র অল্প কয়েক মাসে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশকে স্থিতিশীল করার কাজটি প্রায় সম্পন্ন করে আনা সম্ভব হলেও পরিপূর্ণ সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছুতে আমাদের এখনও অনেকটা পথ পেরোতে হবে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা দেখা গেলেও তা এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। গত এপ্রিল মাসে মার্কিন প্রশাসন কর্তৃক আরোপিত অতিরিক্ত শুল্কের নেতিবাচক প্রভাবও আমাদের অর্থনীতির উপর পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, সম্প্রতি যে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করা হয়েছে, তার কোন নেতিবাচক প্রভাব আপাতত বাজারের উপর পড়ার সম্ভাবনা না থাকলেও, এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হচ্ছে। এ সকল ঝুঁকি মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বৈষম্যহীন ও টেকসই ভিত্তি নিশ্চিত করা এখন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
তিনি আরো বলেন, আপাতত প্রবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধির পরিবর্তে অর্থনীতির ভিত মজবুত করার দিকে আমরা অধিকতর মনোযোগ দিচ্ছি। এ শক্তিশালী ভিতই হবে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের সোপান। আগামীর সেই বাংলাদেশে সবার জন্য মানসম্মত জীবন এবং সকল স্তরে বৈষম্যহীন ব্যবস্থার নিশ্চয়তা প্রদান হবে আমাদের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য পূরণে আমি আপনাদের সকলের সহযোগিতা চাই। ইনশাআল্লাহ্, আমাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের সকল মুক্তিকামী মানুষের জন্য এক অনুকরণীয় আলোকবর্তিকা।
এম এইচ/
Discussion about this post