একটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার দেইর আল-বালাহের আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের আঙ্গিনায় বিমান হামলা চালায়, যেখানে শত শত বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি পরিবার তাদের তাঁবুতে ঘুমাচ্ছিল। সেই তাঁবুর বেশিরভাগ অংশই ছিল দাহ্য নাইলন কাপড়ের। ফলে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি ঘটে ১৪ অক্টোবর ঠিক রাত ১ টায়।
এ ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান একজন নারী ও একটি শিশুসহ চারজন এবং আরও ৪০ জন আগুনে দগ্ধ হন । নিহতদের মধ্যে আলা আল-দালু (৩৮) এবং তার ছেলে শাবান (১৯) রয়েছেন। আলার ১০ বছর বয়সী ছেলে আবদ আল-রহমান হামলায় মারাত্মকভাবে পুড়ে যায় এবং আহত অবস্থায় মারা যায়।সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র শাবান মাত্র এক সপ্তাহ আগেও একটি ইসরায়েলি বিমান হামলার সম্মুখীন হয়। সে ওই দিন এক মসজিদে বসে পবিত্র কুরআন পড়ছিল। ওই সময় মসজিদটিতে হামলা করা হয়। এ হামলায় সামান্য আহত হন শাবান। আহত হয়ে পরিবারের কাছ এই তাঁবুতে এসেছিলেন তিনি। আর এখানে এসেই তাঁকে একেবারে জীবন্ত পুড়ে মরতে হলো।
শাবান এবং আবদ আল-রহমানের বাবা আহমেদ আল-দালু জানান, যখন তাঁবুতে আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, তখন তিনি দ্রুত তাঁর পরিবারকে সরিয়ে নিতে চলে যান। তিনি বলেন, ‘আমি আমার অন্য তিন সন্তানকে বের করে এনেছি যারা মারাত্মকভাবে পুড়ে গিয়েছিল এবং তাদের একটি নিরাপদ জায়গায় রেখে আসলাম। আমার স্ত্রী ও ছেলে শাবান যাতে বের হয়ে আসে তা নিশ্চিত করতে ফিরে তাঁবুতে আবারও ফিরে যাই।’
তাঁবু থেকে বেরোনোর আগের কথা আহমেদ স্মরণ করে বলেন, ‘আমার স্ত্রী ও ছেলে আমাকে বলেছিল যে তারা কিছু কাপড় রাখার চেষ্টা করবে। কিন্তু তারা আশা করেনি যে আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।’আহমেদ জানে না সেই মুহূর্তে কী ঘটেছিল, কিন্তু যখন তিনি যখন তাঁবুতে ফিরে আসেন ততক্ষণে আলা এবং শাবানের আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তাদের মরদেহ ঠিকভাবে চিনতেও পারেননি আহমেদ। তিনি বলেন, ‘তাদের জ্বলন্ত দেহের গন্ধ আমি ভুলতে পারি না। এটা আমার নাক ও মনে আটকে আছে। যতবারই আমি চোখ বন্ধ করি, আমার স্ত্রী ও ছেলেকে জ্বলতে দেখি।’
আহমেদ বলেন, ‘শাবান প্রতিদিন রাতে মসজিদে কয়েকজন যুবকের সঙ্গে কুরআন পড়তেন। তাঁবুতে আমাদের জন্য আরও জায়গা করে দিতে তিনি সেখানে ঘুমাতেন না। মসজিদে হামলার পর আমাদের তাঁবুতে ফিরে আসে, কিন্তু এখানে তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হলো।’
তিনি বলেন, ‘আবদ আল-রহমান গুরুতর আহত হয়েছেন এবং গত শুক্রবার মারা গেছেন। আমার অন্য দুই মেয়ে ফারাহ ও রাহফ এখনও হাসপাতালে রয়েছেন। আমার ছেলে মোহাম্মদ আক্রমণ থেকে বেঁচে গিয়েছিল কারণ সে তার বন্ধুদের সাথে অন্য একটি তাঁবুতে ঘুমাচ্ছিল। এখন আমি আমাদের আত্মীয়দের একটি তাঁবুতে রয়েছি, কারণ আমরা সবকিছু হারিয়েছি।’
মূলত গাজা শহর থেকে আহমেদের পরিবার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ছয়বার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আহমেদ বলেন, ‘আমি আশা করছিলাম আল-আকসা হাসপাতাল থেকে আমাদের আর যেতে হবে না। আমার আর অন্য কোথাও যাওয়ার সামর্থ্য নেই। কিন্তু এই জায়গাটি এখন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।’গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে রকেট হামলা চালায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এতে ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় বলে জানায় ইসরায়েল। এরপর গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ। যুদ্ধ লেগে যায় দুই পক্ষে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলা এখনো অব্যাহত। মাঝে কিছুদিন যুদ্ধবিরতি থাকলেও অবস্থা তেমন পরিবর্তন হয়নি। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪৩ হাজারে মতো মানুষ নিহত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এস এম/
সুত্রঃ প্লাস নাইন সেভেন টু ম্যাগাজিন
Discussion about this post