কথায় আছে লাখ টাকার বাগান খায় এক টাকার ছাগল। বহুল প্রচলিত এ উক্তির সত্যতা মিললো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা ড. মতিউর রহমানের বেলায়। সম্প্রতি রেকর্ড দামে ছাগল কেনার একটি ফেসবুক ভিডিও ভাইরাল হবার পর থেকেই নড়েচড়ে বসে গণমাধ্যম। মিডিয়াপাড়ায় ওঠে তুমুল শোরগোল। বাদ যান না নেটিজেনরাও। একটি ছাগলের দাম কেন্দ্র করে নিজেরাই শুরু করেন ঐকিক নিয়মের অঙ্ক।
সরকারি চাকরিতে গ্রেড ১ এর একজন কর্মকর্তা সাধারণত বেতন পেয়ে থাকেন ৭৮ হাজার টাকা। সর্বসাকুল্যে যদি দেড় থেকে ২ লাখ টাকাও বেতন পায় তাহলে বছরে তার বেতন আসে ২৪ লাখ টাকা। বার্ষিক ২৪ লাখ টাকা বেতন পাওয়া একজন সরকারি কর্মকর্তার ছেলের ১৫ লাখ টাকার ছাগল ও ৭০ লাখ টাকার গরু কোরবানী দেয়ার বিষয়টি নজর এড়ায় না কারোরই। এরপর আলোচনায় কত ধানে, কত চালের পরিবর্তে কত বেতনে কত সম্পদ এই বিশেষ নিয়ে তোড়পালের সৃষ্টি হয় সবার মনে। এরপরই, একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে থলের বিড়াল। বেরিয়ে আসে মতিউরের ভয়ংকর সব তথ্য। মিডিয়ার তৎপরতা ও গোয়েন্দা সংস্থার তদারকিতে ছাগলকাণ্ডের মতিউর রহমান রাতারাতি হয়ে উঠেন টক অব দ্যা কান্ট্রি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স বিভাগে পড়াশোনা করা মতিউর রহমান অনেক কোম্পানির ছায়া পরিচালক। একাধিক ছোট কোম্পানি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাজারসংশ্লিষ্টদের কাছে ব্যাপক পরিচিত পান তিনি। শেয়ারবাজার কারসাজিতে জড়িতদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলেও অনুসন্ধানে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে মতিউরের। এ সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে কাটাছেড়ায় ব্যস্ত গণমাধ্যমগুলো। মতিউর রহমানের ১ ব্যাংক একাউন্টেই মিলেছে ১১৭ কোটি টাকা। এছাড়াও নামে-বেনামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি।
জানা যায়, ময়মনসিংহের ভালুকার প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর অভিযুক্ত মতিউর রহমানের একটি জুতার কারখানা রয়েছে। এর নাম গ্লোবাল সুজ। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় মতিউরের রয়েছে বিপুল সম্পদ, প্লট ও বাগানবাড়ি। একটি যৌথ উন্নয়ন কোম্পানির সাথে বসুন্ধরায় ১৪ তলা বাণিজ্যিক ভবনে তাঁর মালিকানা থাকার সত্যতা মিলেছে। এছাড়াও গাজীপুর সদরের খিলগাঁও মৌজায় নামে বেনামে বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে তাঁর।
ঢাকার বাইরে সাভার থানার বিরুলিয়ায় মোট ৮টি খতিয়ানে ৬০ শতাংশ এবং একই মৌজায় স্ত্রীর নামে ১৪.০৩ শতাংশ জমির প্রমাণ মিলেছে। গ্লোবাল সুজ কোম্পানির নামে ৭টি খতিয়ানে ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে। এর মূল্য প্রায় ৯০ কোটি টাকা।
এছাড়াও পূর্বাচলে আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শ্যুটিং স্পটের মালিক তিনি। এ প্রতিষ্ঠানটি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আই ব্লকে সোবহান অ্যাভিনিউর প্লটে বাণিজ্যিক ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে।
গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, মতিউর রহমানের স্ত্রী-সন্তান ও ঘনিষ্ঠদের নামে ঢাকাতেই অন্তত ২ ডজন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে। বসুন্ধরার ডি ব্লকের তার নিজস্ব ভবন রয়েছে। সাত তলা ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় প্রথম স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চেয়ারম্যান লায়লা কানিজকে নিয়ে সপরিবারে বাস করেন।
গুলশানের সাহাবুদ্দিন পার্কের পাশে আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের বেগ পার্ক ভিউতে রয়েছে তার ৪টি ফ্ল্যাট। দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার থাকেন লালমাটিয়ার ইম্পেরিয়াল ভবনে। কাকরাইলেও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁর নামে। ছাগলকাণ্ডে ভাইরাল হওয়ার মুশফিকুর রহমান ইফাত মূলত তাদেরই সন্তান। বর্তমানে কাকরাইলের ওই ফ্ল্যাটে অবস্থান করছেন। এছাড়া ধানমণ্ডিসহ অভিজাত এলাকায় আরো অসংখ্য বিলাসবহুল বাড়ীর খোঁজ মিলেছে তার।
ভাইরাল হওয়া ছেলের পর মতিউর রহমানের একের পর এক পরিবারের সদস্যদের তথ্যও উঠে আসছে। এর মধ্যে তাঁর মেয়ের ল্যাম্বারগিনি গাড়ির ব্যবহারের ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। যার দাম বাংলাদেশি টাকার অঙ্কে ৪ কোটি টাকা।
মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকিও একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। জানা যায়,তাঁর নামে-বেনামে শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি আছে। নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল বাড়ি, রিসোর্ট, ওয়ান্ডার পার্ক।
টিবি
Discussion about this post