পশ্চিম ফ্রান্সের ভ্যানেস শহরে ৭৪ বছর বয়সী সাবেক সার্জন জোয়েল লে স্কুয়ার্নেক। তার বিরুদ্ধে ২৯৯ রোগীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার থেকে এক ফরাসি আদালতে তার বিচার শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে তার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন প্রায় ২৯৯ রোগী যাদের বেশিরভাগরই বয়স ১৫ বছরের কম। এসব ভুক্তভোগীর বেশির ভাগকেই তিনি অজ্ঞান অবস্থায় বা জ্ঞান ফেরার পরপরই ধর্ষণ করেন।
বিচারের মুখোমুখি এই অভিযুক্ত আদালতে স্বীকার করেছেন, তিনি তার বাড়িতে আসা শিশুদেরও শিকার বানিয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেছেন, “আমি সুযোগ পেলে (আমার এক সন্তানের) বন্ধুকে নির্যাতনের চেষ্টা করতাম,” যা মামলার প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
ভুক্তভোগী সেই নারী সে সময় শিশু ছিলেন। আদালতকে তিনি জানান, ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে লে স্কোয়ার্নেকের বাড়িতে যাওয়ার সময় তিনি তার নিপীড়নের শিকার হন।
ওই নারী বলেন, যখন তার বয়স মাত্র ৬ বছর, তখন স্কোয়ার্নেক তাকে একটি কামরায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন। সেই সময় তার মা ও স্কোয়ার্নেকের স্ত্রী বসার ঘরে কথা বলছিলেন। কয়েক সপ্তাহ পর স্কোয়ার্নেক একটি বাথরুমে একা পেয়ে তাকে আবারও ধর্ষণ করেন। এর কয়েক মাস পর স্কোয়ার্নেক আবারও তাকে আলাদা করার চেষ্টা করেন, কিন্তু তিনি সে সময় দৌড়ে পালিয়ে মায়ের কাছে ফিরে যান।
স্কোয়ার্নেক তার বিরুদ্ধে আনা অনেক অভিযোগ মনে নেই বলে দাবি করেছেন। তবে আদালতে স্বীকার করেন যে, তিনি ‘বাথরুমের ঘটনাটি’ মনে করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে যখন বান্ধবীদের বাড়িতে আনত, তখন আমি তাদের নিপীড়ন করতাম। সেদিন আমি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম, আর তখনই ছোট্ট এস-কে (ভুক্তভোগী সেই নারীর নামের আদ্যক্ষর) টয়লেটে যেতে দেখি। আমি তখন টয়লেটে গিয়ে, ঠিক যেমনটা বর্ণনা করেছি সেই কাজগুলো করি।’
এই মামলাটি ফরাসি আদালতে অন্যতম বৃহৎ শিশু যৌন নির্যাতনের মামলার একটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে, তিনি অপারেশনের সময় রোগীদের নির্যাতন করেছিলেন এবং তাঁর কর্মজীবনের শেষ পর্যন্ত এই রকম অপরাধের অভিযোগ থেকে কোন কার্যকর তদন্ত চালু হয়নি।
তবে ২০০৫ সালে শিশুদের যৌন নিপীড়নের ছবি রাখার দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তিনি ২০১৭ সালে অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যান। এরপর এক ছয় বছর বয়সী শিশু তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করে এবং পুলিশ তার কম্পিউটারে সংরক্ষিত নির্যাতনের ডায়েরি ও অন্যান্য বিবরণ উদ্ধার করে।
আদালতে লে স্কোয়ার্নেক ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে নির্যাতনের সময় কম কথা বলতেন, যাতে শিশুরা ভয় পেয়ে কথা না বলে। তিনি বলেন, ‘আমি শুধু নিজের কথাই ভাবতাম।’
এ ইউ/
Discussion about this post