মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করল সরকার। দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকালই তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো জামায়াত-শিবিরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলো।
বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০০৯ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইনে নির্বাহী আদেশে এই সংগঠন দুটিকে নিষিদ্ধ করেছে। ফলে এই দুই সংগঠন ও এর সব অঙ্গ সংগঠন ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে গণ্য হবে।
এই আইনের ১৮ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কাজের সাথে জড়িত রয়েছে বলে সরকারের কাছে যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ব্যক্তি বা সত্তাকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারবে।
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা জামায়াত আগেই রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন হারিয়েছে। গঠনতন্ত্র সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন ‘অবৈধ ও বাতিল’ ঘোষণা করে রায় দেয়। গত বছর আপিল বিভাগ হাইকোর্টের ওই রায় বহাল থাকে। যার ফলে বিএনপির এক সময়ের শরিক জামায়াত নির্বাচন করার যোগ্যতা হারায়।১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ নামে বিভিন্ন দল গঠন করে জামায়াত ও এর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ, যার পরে নাম হয় ইসলামী ছাত্র শিবির। সারা দেশে সেময় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মতো যুদ্ধাপরাধ ঘটায় জামায়াত। যুদ্ধাপরাধ মামলার বিভিন্ন রায়েও বিষয়গুলো উঠে আসে। একটি মামলার রায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতকে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যা দেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘ধর্মের অপব্যবহারের’ কারণে নিষিদ্ধ হয় জামায়াত। জাতির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে দলটিকে রাজনীতি করার অধিকার দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সাবেক স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের আমলেও জামায়াতে ইসলামি নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।
এবার, সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে ব্যাপক তাণ্ডব ও নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে জামায়াত নিষিদ্ধ হলো। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় বিভিন্ন এলাকায় রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা করা হয়।রাজধানীর রামপুরায় বিটিভি ভবন, বনানীতে সেতু ভবন, মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
আগুন দেওয়া হয় এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা এবং মেট্রোরেলের দুইটি স্টেশনে। সংঘাতে ১৫০ মানুষের মৃত্যুর হিসাব দিয়েছে সরকার। সংবাদমাধ্যমের খবরে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর এসেছে। সরকারের ভাষ্য, শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে চেপে নাশকতা করেছে জামায়াত ও শিবির। ইন্ধন দিয়েছে সাথে বিএনপি।
এস এম/
Discussion about this post