কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতার কারণে দেশজুড়ে কারফিউ ঘোষণা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শুক্রবার (২৬ জুলাই) জুমার নামাজকে ঘিরে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জুমার নামাজের পর আন্দোলনকারীরা রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিলসহ নাশকতা করতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। এজন্য রাজধানীসহ সারাদেশের মসজিদগুলোর আশেপাশে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, নামাজের কথা বলে দুষ্কৃতকারীরা জড়ো হতে পারে বলে তথ্য রয়েছে। সেই কারণে বায়তুল মোকাররমসহ জাতীয় মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোটা আন্দোলনের নামে আর কাউকে রাস্তায় নামতে দেয়া হবে না। কেউ রাস্তায় অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করলেই শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে।
দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, দুষ্কৃতকারীরা জুমার নামাজ পড়ার নাম করে জড়ো হতে পারে। এজন্য শুধু বায়তুল মোকাররম নয়, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার বড় মসজিদগুলোর আশেপাশে পুলিশ মোতায়েনসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহের শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম এলাকাসহ আশেপাশের এলাকায় বিক্ষোভ হয়। তবে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের চেয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই অংশ নিয়েছিল বেশি। এজন্য এই শুক্রবারও জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ বা ঝটিকা মিছিল হতে করতে পারে বলে শঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা ইতোমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় যারা অগ্নিসংযোগ করেছে, তাদের অনেককেই চিহ্নিত করেছেন। তাদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এছাড়া বাড্ডা এলাকায় একজন ব্যবসায়ী আন্দোলনকারীদের অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছেন বলে তথ্য পেয়েছেন। তাকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। একইসঙ্গে যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, উত্তরা ও মোহাম্মদপুর এলাকায় যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চলমান বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয় গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই)। এরপর টানা দুই দিন সারা দেশে বিক্ষোভ ও সহিংসতায় দুই শতাধিক মানুষের প্রাণ গিয়েছে। আহত হয়েছে সহস্রাধিক ব্যক্তি। আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে মারা গেছেন তিন পুলিশ সদস্য। পুলিশেরও শতাধিক সদস্য আহত হয়েছেন।
গত শুক্রবার থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক এই সহিংস ঘটনায় রাজধানীসহ সারা দেশে দেড় শতাধিক মামলা দায়েরের পাশাপাশি দুই সহস্রাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাও রয়েছেন।
টিবি
Discussion about this post