জুলাই গণহত্যা ক্ষমা করার অধিকার কারও নেই: জামায়াত আমির

যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সময় তৎকালীন সরকার যা করেছিল তা ছিল সুস্পষ্ট গণহত্যা। কেবল ক্ষমতায় টিকে থাকতেই এসব করা হয়েছে। লাশ গুম করা হয়েছে। তার প্রমাণ আশুলিয়ায়। সেখানে ট্রাকের (ভ্যান) ওপর লাশের স্তূপ। তারপর ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে আগুন। আমরা কোন সভ্যতায় বসবাস করছি। এই গণহত্যা যারা চালিয়েছে তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতায় এসব কথা বলেন জামায়াতের আমির।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ওপর নানাভাবে জুলুম করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দিশেহারা হয়ে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরকে নিষিদ্ধও করে তারা।’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিশোধ নেব না বলেছি। তার মানে আমরা আইন হাতে তুলে নেব না। কিন্তু সুনির্দিষ্ট ঘটনায় মামলাও হবে। সাজাও পেতে হবে। জুলাইয়ের এই গণহত্যা ক্ষমা করার কারও অধিকার নেই।’

ছাত্রদের শৃঙ্খলিত আন্দোলনকে উসকে দিতে চেয়েছিল বিগত সরকার, কিন্তু ছাত্ররা তাতে থামেনি মন্তব্য করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘সে সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারেননি। তাদের জুলুমের কারণেই ছাত্ররা এক দফা দাবি শুরু করে। পরে তাদের সঙ্গে সহমত জানায় আমজনতা ও বিরোধী মতের রাজনৈতিক দলগুলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা সভ্য দেশে আয়নাঘর কীভাবে থাকতে পারে? শুরুতে অনেকেই আয়নাঘরের কথা বিশ্বাস না করলেও আজ এটা প্রকাশ্যে এসেছে। শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ওপরও একইভাবে নির্যাতন হয়েছে।’

মিথ্যা সাক্ষ্যর মাধ্যমে জামায়াত নেতাদের অনেককেই ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের জেল-জুলুম দেওয়া হয়েছে। গুম করা হয়েছে। জামায়াত নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যন্ত নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে। আয়নাঘরের মতো জায়গায় আটকে রাখা হয়েছে। ধর্মীয় অধিকার পর্যন্ত সেখানে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। দল হিসেবে সাড়ে ১৫ বছর আমাদের সঙ্গে যে বৈরিতা করা হয়েছে, আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে, অফিসগুলোতে তালা ঝোলানো হয়েছে, আমাদের স্বস্তির সঙ্গে চলতে দেওয়া হয়নি, দফায় দফায় বিভিন্নভাবে আমাদের নির্যাতন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘শুধু জামায়াত নয়, বিরোধী দল বিএনপি, হাজারো ওলামায়ে কেরামের ওপর একই ধরনের তাণ্ডব চালানো হয়েছিল। যদিও জামায়াতের ওপর তাণ্ডব ছিল ভিন্নমাত্রা, ভিন্ন গভীরতার।’

জামায়াতের আমির বলেন, ‘গরিব দেশের কিছু চতুর ধনী জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে, ব্যাংকগুলো ফোকলা করে দেশের বাইরে অর্থ নিয়ে গেছে। এই অর্থ ১৮ কোটি মানুষের। এদের আইনের আওতায় এনে অর্থও ফিরিয়ে আনতে হবে। এদের কোনোভাবেই ক্ষমা করা যায় না।’

ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অর্জিত এ পরিবর্তনকে কেউ যাতে ব্যর্থ করে দিতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

টিবি