ঢাকার অন্যতম ক্রাইমজোন জেনেভা ক্যাম্প। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ-র্যাব। হঠাৎ করে সাঁড়াশি অভিযান, মিডিয়া কাভারেজ তারপর আগের যা অবস্থা তাই। পরবর্তীতে আর কোন ফলোআপ নেই । এভাবেই বছরের পর বছর দায়সাড়া দায়িত্বহীনতা জেনেভা ক্যাস্পকে অন্যতম ক্রাইমজোনে পরিণত করেছে । ছিলো না কোন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। যার কারণে জেনেভা ক্যাম্পের অপরাধ নির্মূল সব সময় অপধরাই থেকে গেছে । মাদক ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্র, দাগি অপরাধীদের অভয়ারণ্য – জেনেভা ক্যাম্পে ওপেন সিক্রেট। রাজধানীর মিরপুর ও মোহাম্মদপুরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে পুলিশের কঠিন চ্যালেঞ্জ এই বিহারী ক্যাম্প। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেয়েও বেশী শক্তিশালী?
হঠাৎ করে অভিযান চালিয়ে দীর্ঘদিনের জমে থাকা এ সমস্যা সমাধান করা আদৌ সম্ভব নয়। বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে অপরাধীদের ধরতে গিয়ে পুলিশ বা র্যাব সাময়িকভাবে সফল অভিযান চালালেও , এসব অপরাধীরা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। বরং আগের চেয়ে আরও বেশী অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কাজেই এসব হঠাৎ অভিযান জনমনে স্বস্তি আসবেনা তা বলাই যায়। আবার ক্যাম্পে অবস্থান করা সবাই যে অপরাধী তা নয়। সাধারণ বাসিন্দারা নানারকম সৎ পেশায় অনেকদিন ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই । রাজধানীর সেলুন ও মেকানিক্স পেশায় সুনামের সাথে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। তবে ক্যাম্পের মধ্যে থাকা মাদক কারবারিদের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে মাঝে মাঝেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব কারণে বিহারী ক্যম্পের সাধারণ মানুষরাও এক ধরণের নিরাপত্তাহীনতায় থাকেন । এ সমস্যা সমাধানের উপায় কি ?
মাদক, অস্ত্র, অবৈধ কর্মকাণ্ড মূলোৎপাটন করতে হলে শুরুতেই বিহারি ক্যম্পের বাসিন্দাদের ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে। প্রত্যেকটি পরিবারের সদস্যদের নাম, মোবাইল নম্বর – পেশা ইত্যাদি থাকবে ডাটাবেজে এবং তা অবশ্যই নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিবিড়ভাবে এসব ডাটাবেজ অনলাইনে ও অফলাইনে পর্যবেক্ষণ করবে। পাশাপশি বহিরাগত কেউ ক্যাম্পে আসে কি না অথবা কি কাজে আসে তারও বিস্তারিত তথ্য জানতে হবে। প্রয়োজনে এসব এলাকায় অস্থায়ী ফাঁড়ি স্থাপন করা যেতে পারে। বিহারী ক্যাম্পের সব প্রবেশ পথে নিরাপত্তা চৌকি বসাতে হবে । শুধু নিরাপত্তা জোরদার করে সমস্যা নিমূল করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রের উচিত বিহারি ক্যাম্পে বসবাসরত বাসিন্দাদের বৈধ কাজের ব্যবস্থা করা। তাহলে অপরাধে জড়ানোর আশঙ্কা কম থাকবে । চলমান অভিযানে সাময়িক প্রশান্তি হয়তোবা আসবে তবে সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা করে আগানো না গেলে সমস্যা সমস্যাই থেকে যাবে ।
লেখক : আব্দুল্লা আল রাফি
সাংবাদিক
এস এইচ/
Discussion about this post