হোসনে আরা পপি নামের এক গৃহিণীর ব্যাংক হিসাবে পাওয়া গেছে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে উঠে এসেছে, এই টাকা তাঁর স্বামী সোহেল রানা বিশ্বাসের। ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি এই অর্থ সংগ্রহ করেছেন। সোহেল রানা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া জেলার (কারাধ্যক্ষ)।
দুদক বলছে, হোসনে আরা নিজেকে মৎস্যচাষি দাবি করলেও এগুলোর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। জেলার সোহেল রানা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ জায়েজ করতে স্ত্রীকে মৎস্য খামারি সাজিয়েছেন।
সাড়ে পাঁচ বছর আগে সোহেল রানা টাকা, মাদকসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর দুদক তাঁর সম্পদের খোঁজে তদন্ত শুরু করে। ২০২২ সালের ৩০ জুন তাঁর বিরুদ্ধে দুদক মামলা করে। দুই বছর তদন্ত শেষে স্ত্রী হোসনে আরার নামে এই নগদ টাকার সন্ধান পায় দুদক।
দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত প্রথম আলোকে বলেন, হোসনে আরা গৃহিণী হলেও স্বামীর ঘুষ–দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকার মালিক হয়েছেন। এ ব্যাপারে শিগগিরই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে।
২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ময়মনসিংহগামী একটি ট্রেন থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ, মাদকসহ সোহেল রানা বিশ্বাসকে আটক করে রেলওয়ে পুলিশ। সেখানে তল্লাশির এক পর্যায়ে তাঁর ২টি ব্যাগ থেকে ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রিসিট (এফডিআর), ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক, বিভিন্ন ব্যাংকের পাঁচটি চেক বই, একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা ও ১২ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় সোহেল রানা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে দুটি মামলা হয়। পরে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে কারা কর্তৃপক্ষ। এরপর সোহেলের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক। পরে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ২৩৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর দুদকের করা মামলাটি এখনো তদন্তাধীন।
দুদক জানায়, নেত্রকোনার পূর্বধলায় মো. দেলোয়ারের কাছ থেকে ৩০৪ শতাংশ জমি মৎস্য চাষের জন্য ভাড়া নেন হোসনে আরা। ১০০ টাকা মূল্যের তিনটি নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে চুক্তিনামা করেন ২০১১ সালে; কিন্তু তিনটি স্ট্যাম্প ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে রাজু আহমেদ (লাইসেন্স নম্বর ৬৩১/১২) নামের ভেন্ডারের কাছে বিতরণ করা হয়। এর আগের অর্থাৎ ২০১১ সালের এই স্ট্যাম্প ব্যবহারের সুযোগ নেই। ২০১৭ সালের স্ট্যাম্পকে ২০১১ সালের দেখিয়ে ভুয়া ও মিথ্যা চুক্তিনামা তৈরি করে তা ব্যবহার করেছেন হোসনে আরা।
২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার হিসেবে কর্মরত ছিলেন সোহেল রানা। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তাঁর স্ত্রীর মৎস্য খামার রয়েছে। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।
সোহেলের ঘুষের টাকা বৈধ করতে স্ত্রীকে মৎস্য খামারি সাজালেও এগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এনামুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ময়মনসিংহের তিনটি ব্যাংকের শাখায় হোসনে আরার নামে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা পাওয়া গেছে।
সুত্রঃ প্রথম আলো
এস এম/
Discussion about this post