ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। ফল অনুযায়ী টানা তৃতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি। তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে মোদির বিজেপি। গতকাল মঙ্গলবার লোকসভা নির্বাচনের ফল মোদির দল বিজেপি এককভাবে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন পেলেও তাদের জোট এনডিএ তিন শ আসনও ছুঁতে পারেনি। এবারের নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দিয়ে সামনে উঠে এসেছে কংগ্রেসের উদ্যোগে গড়া ‘ইন্ডিয়া’ জোট।
সরকার গড়লেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদিকে এখন থেকে হতে হবে পরমুখাপেক্ষী। অর্থাৎ প্রথমবারের মত জোট সরকার গঠন করতে হবে মোদিকে।
মঙ্গলবার (৪ জুন) মধ্যরাতে দেশটির নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, ৫৪২টি আসনের মধ্যে ২৪০টিতে জয় পেয়েছে নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। আর ৯৯টি আসনে জয় পেয়েছে প্রধান বিরোধীদল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস। অর্থাৎ বিজেপি একা সরকার গঠনের জন্য ২৭২ ম্যাজিক ফিগারের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ।
বিজেপিকে সরকার গড়তে হলে নির্ভর করতে হবে প্রধানত দুই শরিক নীতীশ কুমারের জেডি–ইউ ও অন্ধ্র প্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডুর দল তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) ওপর। এই দুই দলের সম্মিলিত আসন ২৮টি।
এদিকে সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ২৯৩ আসন পেয়েছে। ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ২৩৪টি আসন।
২০১৯ সালের নির্বাচনে মাত্র ৯৪টি আসনে জিতেছিল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট। আর কংগ্রেস এককভাবে পেয়েছিল ৫২টি আসন। অর্থাৎ এবারের নির্বাচনে বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে ভারতের প্রাচীনতম এই রাজনৈতিক দলটির।
রামমন্দির নির্মাণ, ৩৭০ ধারা বিলুপ্তি, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) প্রতিশ্রুতিসহ নির্বাচনের আগে প্রচারের জন্য নানারকম পন্থা অবলম্বন করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। এমনকি ফলাফলের আগ মূহুর্তে বসেছিলেন ৪৮ ঘণ্টার ধ্যানেও। তবে কোনও কিছুই যেন কাজ করেনি এবার। সহযোগীদের সমর্থনের ওপর নির্ভর করেই সরকার গঠন করতে হবে বিজেপিকে।
বিজেপির সবচেয়ে বড় হার হয়েছে ভারতের বড় রাজ্যগুলোর মধ্যে। দেশটির তিন বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং পশ্চিমবঙ্গেই পরাস্ত হয়েছে মোদির দল। বিজেপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি-কংগ্রেসের জোটের তোড়ে থুবড়ে পড়েছে বিজেপি, মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস-শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে)-এনসিপি (শরদ পাওয়ার) মোদীর দলকে পেছনে ফেলেছে। আর পশ্চিমবঙ্গে সেই ‘দায়িত্ব’ একাই পালন করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল।
জোট সরকারের ক্ষেত্রে অন্য দলগুলো বিজেপির ওপর চাপ বৃদ্ধি করতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। ভোটের ফলাফল বলছে, দেশে মোদী সরকার থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মানুষের ঢালাও সমর্থনে খানিকটা ভাটা পড়েছে।
টিবি
Discussion about this post