সেমিফাইনালেই থেমে গেছে আফগান রূপকথা। দুই দল এর আগে কখনো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেনি। লক্ষ্য ছিল তাই অভিন্ন। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতা ছড়াবে, ব্যাট-বলের ঝাঁজালো পারফরম্যান্স হবে, কথার লড়াইয়ে মত্ত হবে, আরও কতো কিছু!
প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালের হাতছানি। দক্ষিণ আফ্রিকা এর আগে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে সাতবার খেলেছে সেমিফাইনাল। কিন্তু ফাইনালের টিকিট পায়নি। তাদেরও চ্যালেঞ্জ ছিল সেমিফাইনালের গেরো ছুটানোর। আফগানিস্তানের রূপকথার গল্পে বাঁধা হয়ে আসলো দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদেরকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক কোনো আসরের ফাইনাল খেলেছে প্রোটিয়ারা।
আফগানিস্তান যে শরীরী ভাষায় অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছিল, সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকেও একইভাবে সামলে নেবে এমনটাই বিশ্বাস ছিল। কিন্তু ২২ গজে নিস্তরঙ্গ দিন কাটাল আফগানিস্তান। এমন সময়ে তাদের বাজে দিন গেল, যেদিন ইতিহাসের অক্ষয় কালিতে নিজেদের নাম তোলার সুযোগ ছিল আফগানিস্তানের।
আরও একটি অঘটনের জন্ম দিয়ে ফাইনালে ওঠার লক্ষ্যে ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নামে রশিদ খানের দল। ত্রিনিদাদে সেমিফাইনালে ব্যাট করতে নেমে বাস্তবতা টের পেলো আফগানরা। প্রোটিয়া বোলিংয়ের সামনে পুরোপুরি খেই হারিয়ে বসে তাদের ব্যাটিং লাইনআপ। মার্কো ইয়ানসেন, কাগিসো রাবাদা এবং তাবরিজ শামসির তোপের মুখে পড়ে মাত্র ৫৬ রানে অলআউট হয়ে গেছে আফগানিস্তান।আফগানিস্তানের ব্যাটাররা মোটেও দাঁড়াতে পারেনি প্রোটিয়া বোলারদের সামনে। আজমতউল্লাহ ওমরজাই সর্বোচ্চ ১০ রান করেন। আর কোনো ব্যাটারই দুই অংকের ঘর স্পর্শ করতে পারেননি।
এদিকে,৫৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা শুরুতে একটু ধুঁকলেও পরে দাপট দেখিয়ে ম্যাচ জিতে নেয় অনায়াসে। ব্যাট-বলে আফগানিস্তান নিস্তরঙ্গ দিন কাটিয়েছে। তাতে ক্রিকেট বিশ্ব দেখল ঝাঁজহীন এক সেমিফাইনাল।টি-টোয়েন্টির বৈশ্বিক আসরে সেমিফাইনালে এর আগে একশর নিচে অলআউট হয়নি কোনো দল। ত্রিনিদাদের ট্রিকি উইকেটে আফগানিস্তান ৫৬ রানে অলআউট হয়ে প্রমাণ করেছে, দিনটা আসলেও তাদের ছিল না। টি-টোয়েন্টিতে এর আগে তাদের সর্বনিম্ন রান ছিল ৭২। ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওই রান করেছিল।
সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা ৬৭ বল আগে জয় নিশ্চিত করে। ৯ উইকেটের জয়ে তারা চলে গেল ফাইনালে। ২৯ জুনের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হবে ভারত বা ইংল্যান্ড।
ত্রিনিদাদের সতেজ উইকেটে হয়েছিল সেমিফাইনাল ম্যাচ। উইকেট ছিল খানিকটা ট্রিকি। বল সহজে ব্যাটে আসলেও অসমান বাউন্স ছিল। ফাঁটল ছিল। ছিল ঘাস। তবে বোলারদের জন্য স্বর্গোদ্যান, তেমনটাও নয়। দক্ষিণ আফ্রিকা যতটা না ভালো বোলিং করেছে, আফগানিস্তান ঠিক ততটাই বাজে ব্যাটিং করেছে। ব্যাটসম্যানরা উইকেট আগলে রাখতে পারেননি নতুন বলে। অব্যবহৃত উইকেটে ব্যাটিং একটু কঠিন হবে তা জানা। কিন্তু যেভাবে ব্যাটিং করার কথা সেভাবে ব্যাটিং হয়নি। হয়নি কোনো প্রতিরোধ। বরং শট খেলতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন আফগান ব্যাটসম্যানরা।
তবে টস ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে কিনা সেটা বিরাট প্রশ্নের। রশিদ খান টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। অথচ দক্ষিণ আফ্রিকা টস হেরেই খুশি! কারণ আগে তারা বোলিং করতে চেয়েছিল। পেসাররা একটু হলেও সুবিধা পাবে এমন বিশ্বাস ছিল প্রোটিয়াদের। আফগানিস্তান টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে ভুল করলো কিনা সেটা নিয়েই এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।
এস আর/
Discussion about this post