মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রক্ষণশীল বাণিজ্যনীতির প্রভাব পড়ছে বিশ্বজুড়ে। বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী ব্যক্তির মধ্যে ৯ জনের সম্মিলিত সম্পদ থেকে অন্তত ৩৭০ বিলিয়ন ডলার হ্রাস পেয়েছে। শুধুমাত্র ওয়ারেন বাফেটই ব্যতিক্রম, যিনি এই সময়ের মধ্যে সম্পদ বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন।
ট্রাম্পের ধারাবাহিক শুল্ক আরোপের কারণে বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পাল্টা পদক্ষেপ বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও ঝুঁকি বাড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যা প্রযুক্তি খাতসহ বিভিন্ন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
চীন, ভিয়েতনাম ও তাইওয়ান-বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদনকেন্দ্রগুলো-যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের কবলে পড়েছে। যদিও এসব দেশ সস্তা শ্রম ও উন্নত লজিস্টিক সুবিধা দিয়ে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে ছিল, কিন্তু শুল্কের বাড়তি খরচ সেই সুবিধাগুলোকে ম্লান করে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধ আরও গভীর হবে এবং চিপসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিপণ্য শুল্কের লক্ষ্যবস্তু হবে। এর ফলে প্রযুক্তি খাতের শেয়ার বাজারে বড় ধরনের পতন ঘটেছে। একইসঙ্গে বড় ধাক্কা খেয়েছেন টেক-বিলিয়নেয়াররা।
চীনের প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটনের শুল্ক আরোপের পর বেইজিং সাতটি গুরুত্বপূর্ণ ধাতুকে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই ধাতুগুলো অস্ত্র থেকে শুরু করে পরমাণু চুল্লি, ব্যাটারি, চিপস এবং সুপারকন্ডাক্টরসহ নানা প্রযুক্তিপণ্যে ব্যবহৃত হয়। বিশ্বের ৯০ শতাংশ ‘রেয়ার আর্থ এলিমেন্ট’ উৎপাদন করে চীন, এবং এই নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তারা নিজেদের আধিপত্য রক্ষা করার বার্তা দিয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইলন মাস্ক, উল্টো পথে ওয়ারেন বাফেট
ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী, টেসলা ও এক্স-এর মালিক ইলন মাস্ক বছরের শুরু থেকে ১৩৫ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছেন। তবুও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তির অবস্থান এখনও তারই দখলে।
তালিকায় পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন, ল্যারি এলিসন (অরাকল) তার ক্ষতি হয়েছে ৪৪.৯ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া জেফ বেজোস (অ্যামাজন), ল্যারি পেজ (গুগল), সার্গেই ব্রিন (গুগল), বার্নার্ড আর্নো (লুই ভিটোঁ), মার্ক জাকারবার্গ (ফেসবুক), স্টিভ বালমার (প্রাক্তন মাইক্রোসফট সিইও), বিল গেটস (মাইক্রোসফট) এর যথাক্রমে ৪২.৬, ৩৪.৭, ৩২.৫, ২৬.২, ২৪.৫, ২০.৪ এবং ৯.৪৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে ওয়ারেন বাফেট তার বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের বিনিয়োগের মাধ্যমে তার সম্পদে ১১.৫ বিলিয়ন ডলার যুক্ত করে বছরের শুরু থেকে ১৫৪ বিলিয়ন ডলারের মালিক হয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈষম্যমূলক চিত্রই দেখাচ্ছে বৈশ্বিক বাজারে অনিশ্চয়তা ও রক্ষণশীল বাণিজ্যনীতির সরাসরি প্রভাব কতটা গভীর হতে পারে।
সূত্র : দ্য ন্যাশন
এ ইউ/
Discussion about this post