ভারী বৃষ্টি ও বন্যায় রাস্তায় জমেছে কোমরসমান পানি। এর মধ্যে স্কুটার চালিয়ে যাওয়ার সময় পেছনের সিট থেকে ছিটকে রাস্তার পাশের ড্রেনের মধ্যে তলিয়ে যায় ছেলে। তারপর থেকে ছেলেকে খুঁজছেন অসহায় এক বাবা। ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে ঘটেছে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার গুয়াহাটির রাস্তা দিয়ে স্কুটার চালিয়ে যাচ্ছিলেন হীরালাল সরকার। পেছনে বসা ছিল আট বছরের ছেলে অবিনাশ। কোমরসমান পানিতে ডুবে যাওয়া রাস্তায় সাবধানেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন হীরালাল। হঠাৎ কোথাও বাধা পেয়ে তীব্র ঝাঁকুনি খায় গাড়িটি। আর সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে ছিটকে গভীর ড্রেনের মধ্যে পড়ে যায় অবিনাশ। সঙ্গে সঙ্গেই স্কুটার থামিয়ে ছেলেকে খুঁজতে শুরু করেন হীরালাল। কিন্তু এখনো ছেলেকে খুঁজে পাননি তিনি।
হীরালালের এক হাতে ছেলের চটি স্যান্ডেল, আরেক হাতে লোহার রড। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘রড দিয়ে ড্রেনের মধ্যে খোঁজাখুঁজি করে ছেলের স্যান্ডেল খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু ছেলেকে পাচ্ছি না। ছেলেকে না পাওয়া পর্যন্ত আমি কোথাও যাব না।’
হীরালাল ছেলের স্যান্ডেলজোড়া পুলিশের কাছে দিয়েছেন বলে জানান। সরকারি উদ্ধারকর্মী বাহিনী উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। ‘সরকারের অনেক যন্ত্রপাতি আছে। তারা নিশ্চয় আমার ছেলেকে খুঁজে বের করতে পারবে।’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন হীরালাল।
অসহায় এই বাবা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা। ভুবন ভাসানো বৃষ্টি হচ্ছে। হঠাৎ গাড়িটা ঝাঁকুনি খেল আর আমার ছেলেটা ছিটকে পড়ে গেল। আমি দেখতে পেলাম, ড্রেনের ভেতর ছেলে তলিয়ে যাচ্ছে, হাতটুকু বাইরে ভাসছে। লাফিয়ে পড়লাম ড্রেনের ভেতর। কিন্তু ছেলের হাতটুকু ধরতে পারলাম না!’
সারা রাত ড্রেনের মধ্যে খোঁজাখুঁজির পর ভোরবেলা একটি দোকানের বারান্দায় বসেছিলেন হীরালাল। তারপর সকালের আলো ফুটতেই আবার নেমে পড়েছেন নর্দমায়। টি শার্ট আর হাফ প্যান্ট পরা অবিনাশকে তন্ন তন্ন করে খুঁজছেন। তাঁর একটাই কথা, ‘ছেলেকে না নিয়ে বাড়ি ফিরব না।’
আসামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, মৃত্যু বেড়ে ৫৬আসামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, মৃত্যু বেড়ে ৫৬
আসাম রাজ্য সরকার হীরালালের ছেলেকে খুঁজতে স্নিফার ডগ, সুপার সাকার ও এক্সকাভেটর মোতায়েন করেছে। মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত শর্মা হীরালার ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি অবিনাশকে উদ্ধার করতে অভিযান জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন উদ্ধারকারী দলকে।
আসামে ভারী বৃষ্টি ও ব্যাপক বন্যায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৬জন মারা গেছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৫৮ জনের প্রাণহানি ঘটল বন্যায়। এ ছাড়া ২৩ লাখের বেশি মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের বেশ কয়েকটি জায়গায় এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এ এস/
Discussion about this post