তাহাজ্জুদের নামাজ সবচেয়ে বড় জিকির ও সবচেয়ে বড় নফল আমল। যা করলে একজন মানুষ আল্লাহ তাআলার এতটা নৈকট্য লাভ করে যে অন্য কোনো আমল দিয়ে তা সম্ভব না। কেউ চাইলেই তাহাজ্জুদ পড়তে পারবে না। কারণ শয়তান সর্বদা তার পিছনে লেগে থাকে কীভাবে তাহাজ্জুদের পাশাপাশি ফজর থেকে বিরত রাখবে।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হল আল্লাহর মাস মোহারমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হল তাহাজ্জুদের নামাজ।’ (মুসলিম ১১৬৩)
‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি রাতের বেলায় স্বীয় স্ত্রীকে সজাগ করে উভয়ে কিংবা প্রত্যেকে দুই-দুই রাকাত নামাজ আদায় করলে তাদেরকে আল্লাহর স্মরণকারী ও স্মরণকারিণীর তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়। (আবু দাউদ ১৩০৯)’
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে চাইলে অবশ্যই কৌশল অবলম্বন করতে হবে। কারণ কেউ চাইলেই তাহাজ্জুদ পড়তে পারবে না। শয়তান সর্বদা তার পিছনে লেগে থাকে কীভাবে তাহাজ্জুদের পাশাপাশি ফজর থেকে বিরত রাখবে।
‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে যায় শয়তান তখন তার মাথার কাছে এসে বসে তিনটি গিঁট বাঁধে। প্রতিটি গিঁট বাঁধার সময় একটি কথা বলে, তোমার সামনে আছে দীর্ঘ রাত, তুমি ঘুমাও। যখন বান্দা ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর জিকির করে, তখন একটি গিঁট খুলে যায়। সবশেষে যখন সে নামাজ পড়ে, তখন শেষ গিঁটটি খুলে যায়।’ (বুখারি ১১৪২)’
তাহাজ্জুদ নামাজে ওঠার কৌশল
১. ঘুমানোর আগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ত নিয়ে ঘুমাতে উত্তম। এর সবচেয়ে চমৎকার তাৎপর্য হলো, কোনো কারণে তাহাজ্জুদের নামাজের জন্য ঘুম থেকে উঠতে না পারলে সওয়াব পাওয়া যাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি তার বিছানায় এল এবং যার নিয়ত ছিল রাতে উঠে নামাজ আদায় করা, কিন্তু তার ঘুম প্রবল হলো; তার নিয়ত অনুযায়ী তার জন্য পুরস্কার লেখা হবে এবং তার ঘুম আল্লাহর জন্য সদকাস্বরূপ। (নাসায়ি, ইবনে মাজাহ)’
২. অহেতুক কাজ থেকে বিরত থেকে ঠিক সময়ে দ্রুত ঘুমাতে হবে। দ্রুত ঘুমালে তাহাজ্জুদ ও ফজরের শক্তি সঞ্চয় হয়।
৩. তাহাজ্জুদের নামাজকে সহজভাবে নিতে হবে। ফজরের নামাজের ২৫-৩০ মিনিট আগে উঠে এ অভ্যাস রপ্ত করা যায়। এরপরে আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যায়।
হজরত আয়েশা (রা.)-এর বরাতে পাওয়া একটি হাদিসে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা সেই পরিমাণ আমল করো যার সাধ্য তোমাদের রয়েছে।’
৪. ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘুমের আদবগুলো রক্ষা করা প্রয়োজন। যেমন অজুসহ ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুমের দোয়া পাঠ করা। তেলাওয়াত করা।
৫. পানি বেশি করে পান করা: রাতে খাবার খাওয়ার পর ঘুমাতে যাওয়ার আগে পেট ভরে পানি পান করুন। এতে ঘুমের গভীরতা কমে যাবে।
৬. ফজরের নামাজ আদায়কারীদের জন্য ঘোষণাকৃত পুরস্কারগুলোর কথা স্মরণ করা যেতে পারে। মুনাফিকের হাত থেকে বেঁচে থাকা, শেষ বিচারের দিন আলোকিত হওয়া, সারাদিন আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকা, জীবন থেকে অলসতা কেটে যাওয়া, কর্মঠ হওয়া ইত্যাদি পুরস্কারগুলোর কথা স্মরণ করলে জেগে ওঠা যাবে ইনশাআল্লাহ।
এ এ/
Discussion about this post