সত্য, ন্যায় ও অধিকার আদায়ের আওয়াজ সবসময় অত্যাচারীর নিষ্পেষণ-বাধার সম্মুখীন হয়েই সফলতার মুখ দেখেছে। ন্যায়ের আওয়াজ বন্ধ করতে অত্যাচারীর জুলুম বা অন্যায়-অত্যাচারের ইতিহাস অনেক পুরোনো।
সত্য-ন্যায়, অত্যাচার-অবিচার যেন সবসময় মুখোমুখি অবস্থানে থেকেই তবে সত্যের বিজয় আসে। এটাই যেন সৃষ্টির অমোঘ নিয়ম।
অন্যায়-অবিচারের শুরুটাও হয় এমনভাবে যেখানে সত্য-ন্যায়ের বিজয়ী হওয়ার কোনো সম্ভবনার লেশ মাত্রও থাকে না। অত্যাচারীর খড়ক তলে থেকেই ন্যায়ের পক্ষে লড়ে যেতে হয় সত্যান্বেষীদের। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দেখা মেলে নতুন সূর্যের। বিজয় আসে সত্যের।
যারা সত্যান্বেষীদের ওপর অন্যায়-জুলুম করে তাদের সাময়িক আস্ফালন, কর্তৃত্ব হয়তো তাদের আত্মতৃপ্তিতে ভোগায়। কিন্তু তাদের জন্য অপেক্ষা করে শেষ পরিণতি ও আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত শাস্তি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—
وَ سَیَعۡلَمُ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡۤا اَیَّ مُنۡقَلَبٍ یَّنۡقَلِبُوۡنَ
‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সূরা শুআরা, আয়াত : ২২৭)
সীমাহীন অত্যাচার জুলুমে মুক্তি পথ খুঁজে না পেলে আমাদের জন্য আদর্শ হতে পারে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, মুসা আলাইহিস সালাম ও অন্যান্য নবীদের জীবনী।
মুসা আ.-এর জাতির ওপর ফেরাউনের অত্যাচার যখন সব সীমা ছাড়ালো, কোনোভাবেই ফেরাউনকে দমানো সম্ভব নয়, সমুদ্রের ওপার থেকেও বনী ইসরাঈলকে ধরে এনে পরাস্ত করবে বলে মনে হচ্ছিল ঠিক তখনি আল্লাহ তায়ালা তাকে এমনভাবে চুবিয়ে মারলেন যে, তার লাশের সৎকারের জন্যও কোনো প্রাণী বেঁচে রইলো না আশপাশে। ফেরাউনের সেই শেষ পরিণতিকে করলেন বিশ্ববাসী ও বিশেষত অত্যাচারীদের জন্য সতর্কবাতা। কিন্তু পৃথিবীর কোনো আত্যাচারী কখনো এ থেকে সর্তক হয়নি, শিক্ষা নেয়নি।
ইসলামের প্রথম দিনগুলোতে রাসূল সা., সাহাবায়ে কেরামের ওপর মক্কার মুশরিকদের অত্যাচার সব সীমা ছাড়ানোর পরই আল্লাহ তায়ালা হিজরতের নির্দেশ দিলেন। একে একে বদর, উহুদ, খন্দকসহ বিভিন্ন যুদ্ধের মাধ্যমে মুশরিকদের সমূলে ধ্বংস করলেন।
এ জাতীয় ঘটনাগুলো ছাড়াও আল্লাহর রাসূল সা.-এর বিভিন্ন হাদিসের মাধ্যমে অত্যাচারীর পরিণতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। যেখানে তিনি অত্যাচারীর শাস্তি ও পরিণতি সম্পর্কে বলেছেন—
যে ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করবে, আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস :২৩৪২)।
রাসূল সা. আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের ক্ষতি করল অথবা তাকে ধোঁকা দিলো সে অভিশপ্ত।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৯৪১)
রাসূল সা. আরেক হাদিসে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তায়ালা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬১৩)।
আল্লাহ তায়ালা অত্যাচারীকে দুনিয়া-আখেরাত উভয় জগতে শাস্তি দেওয়া শুরু করেন। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন—
দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তায়ালা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১১)
মজলুম বা নিপীড়িতের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না। তাই মজলুমের অশ্রুফোঁটা ও অন্তরের অভিশাপ পতনের অন্যতম কারণ। মজলুমের আর্তনাদের ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে জালিমদের ওপর নেমে আসে কঠিন আজাব। তাদের অধঃপতন ত্বরান্বিত হয়।
রাসূল সা. বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না।
এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া।
দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া।
তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮)
অত্যাচারী কখনো অত্যাচার থেকে ফিরে আসে না। অথচ নিজের জন্যও অত্যাচার হারাম করেছেন। রাসূল সা. হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর কথা বর্ণনা করে বলেন—
‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম কোরো না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৩৭)
এ এস/
Discussion about this post