‘গত ৫ আগস্ট দেশি-বিদেশি সুগভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারকে হটানো হয়েছে। এরপর সমগ্র বাংলাদেশে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নারকীয় হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে ভয় ও ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়।’আওয়ামী লীগের ১০ হাজারের মতো দলীয় স্থাপনায় হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করেন তিনি।
বিবৃতিতে নানক সারা দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে উল্লেখ করেন। এ নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
নানক বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়সহ সারা দেশে ১০ হাজারের মতো দলীয় স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাসভবন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ভস্মীভূত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর শেষ স্মৃতি চিহ্নটুকুও মুছে ফেলা হয়েছে।’
নানক বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শূন্য পর্যায়ে নামিয়ে এনে ইতিহাসের ভয়াবহতম সন্ত্রাসের বিস্তার ঘাটানো হয় এবং সেটাকে নৈতিক বৈধতা দেয় সন্ত্রাসভিত্তিক রাজনৈতিক অপশক্তি। তাদের ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের শিকার হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সনাতনী ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীসহ দেশের সাধারণ মানুষ। এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সহস্রাধিক মানুষ প্রাণ হারায়, অগণিত মানুষ আহত হয়।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর দেশে যখন কোনো আইন ছিল না, বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল সেই সময়কে কাজে লাগিয়ে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর আশ্রয়-প্রশ্রয় বেড়ে ওঠা ডাকাতদল সারা দেশে পাড়ায়-মহল্লায় ডাকাতির উৎসবে মেতেছিল। চুরি-ডাকাতির মাধ্যমে রাতারাতি অগণিত মানুষকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। অবৈধ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে সময় অনুযায়ী কোনো সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়নি। দেশে এত বড় বন্যা পরিস্থিতিতে যথাযথ কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
দেশের শিক্ষা কার্যক্রম বিষয় তিনি বলেন, এরই মধ্যে হয়ে গেল শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এইচএসসি পরীক্ষা। যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মানদণ্ডে দাঁড়িয়ে একটি প্রজন্ম তার ভবিষ্যতের ছক আঁকবে সে প্রজন্মকে অটোপাসের মাধ্যমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে কঠিনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে লেলিয়ে দিয়ে সারা দেশে শত শত শিক্ষক-শিক্ষিকার ওপর যে পাশবিক ও অমানবিক বর্বরতা দেখানো হয়েছে তা ইতিমধ্যে বাঙালি জাতিকে একটি অসভ্য জনগোষ্ঠীতে পরিণত করেছে।
সহিসতায় জড়িতেদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ৫ আগস্টের ঘটনার পরে একে একে বাংলাদেশের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানা হচ্ছে। স্বাধীনতাযুদ্ধের অন্যতম স্মৃতি মেহেরপুরের আম্রকানন মুজিব নগর জাদুঘর, জাতির পিতার ভাস্কর্য, প্রতিমূর্তি, জয়নুল আবেদিনের ভাস্কর্য ভাঙার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ধরনের হীন অপচেষ্টা বাঙালির ঐতিহ্য ও চেতনার মূলে আঘাত। যা বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী সবাইকে ব্যথিত ও মর্মাহিত করেছে। আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ ধরনের ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ ইউ/
Discussion about this post