ঢাকার আকাশ কুয়াশায় ঢেকে আছে। শনিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি রোদের। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকলেও ঢাকায় তীব্র হয়েছে শীতের অনুভূতি।
ঢাকায় দিন ও রাতের (সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা) তাপমাত্রার ব্যবধান পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও কম। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়া এবং উত্তর দিক থেকে ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যাওয়ার কারণে ঢাকাসহ সারা দেশে শীতের তীব্রতা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
শনিবার সকালে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান মাত্র ৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকা ছাড়াও রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলেও সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। উত্তরাঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। তাই সেখানে শীতের তীব্রতা আরও বেশি।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
কিশোরগঞ্জ, পাবনা, দিনাজপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠাণ্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল নিকলি ও চুয়াডাঙ্গায়।
শীত কতদিন থাকবে?
পুরো জানুয়ারি মাস জুড়েই শীতের অনুভূতি থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস। তবে ১৬ থেকে ১৮ জানুয়ারির দিকে দেশ জুড়ে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া ও ঝড়ো বাতাসসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস করা হয়েছে।
এই বৃষ্টিপাত থেমে গেলে তাপমাত্রা কমে গিয়ে ২০ তারিখের পরে মৃদু বা মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ আবার শুরু হতে পারে বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মল্লিক।
এত শীতের কারণ কী?
‘সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আসে, সেখানে শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে। পার্থক্য যদি পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে তবে শীতের অনুভূতি প্রকট থেকে প্রকটতর হয়। অর্থাৎ হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হয়- বলেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।
শুক্রবার বিভিন্ন জেলার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তুলনা করে দেখা গেছে, রংপুর, দিনাজপুর, তেতুলিয়ার মতো উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ অঞ্চলেই তাপমাত্রার পার্থক্য পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম।
এছাড়া ঢাকা, বগুড়া, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলেও তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম।
বেশিরভাগ জেলাতেই সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়াতে শীতের অনুভূতি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কোথাও কোথাও তা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে বলে জানান আহাওয়াবিদ মল্লিক।
নিয়ম অনুযায়ী, তাপমাত্রা আট থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আর চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
আপাতভাবে কিশোরগঞ্জ, ঈশ্বরদী ও চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রাই কেবল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আছে। তবে শীতের তীব্রতা সারাদেশেই অনুভূত হচ্ছে।
শীতের তীব্রতার আরেকটি কারণ কুয়াশা। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন থেকে অতিঘন কুয়াশা থাকে।
রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেটের মতো অঞ্চলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই কুয়াশা বিকেল পর্যন্তও থাকে। এতে করে দিনের বেলা অতি ঘন কুয়াশার স্তর ভেদ করে সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করতে পারে না।
সূর্যের কিরণকালও থাকে কম। সূর্য ওঠার দুই ঘণ্টা পর থেকে সূর্য ডোবার দুই ঘণ্টা আগ পর্যন্ত সময়কে বলা হয় কিরণকাল।
আবহাওয়াবিদ মল্লিক বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে সূর্যের কিরণকাল ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা’। ফলে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে না পারায় মাটি শীতল থাকে এবং তীব্র শীত অনুভূত হয়।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এ জেড কে/
Discussion about this post