ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী বাইন্ডার মোস্তফা আসিফ অর্ণবের কাছে পোশাক নিয়ে হেনস্তার শিকার ঢাবি শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, এজাহারের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ায় তিনি ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পাচ্ছেন। তিনি বলেন, থানা থেকে তার তথ্য ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে, ছাত্রী হেনস্তাকারী মোস্তফা আসিফ অর্ণবকে জামিন দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ফেসবুকে ওই শিক্ষার্থী লেখেন, ‘আমার সেন্সিটিভ ইনফরমেশন পুলিশ পাবলিক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসা করায় বলেছে, এজাহার কপি নাকি পাবলিক করা যায়। তাহলে এজাহার কপিতে এত ইনফরমেশন তারা কেন রাখে? এগুলো অন্য আরেক জায়গায় রাখুক। আর এ বিষয়টি আমাকে শুরুতেই তারা কেন বলে দেয়নি? তাহলে আমি মামলা করতাম না। অসংখ্য নম্বর থেকে রেপ আর ডেথ থ্রেট দেওয়া হয়েছে। কেন? প্রতিবাদ করেছি তাই। আপনারা তো ফ্যাসিস্ট হাসিনার চেয়েও খারাপ। আপনারা তো দেশকে নরক বানাবেন।’
দেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ঢাবি ছাত্রী লেখেন, ‘ইন্টেরিম গভমেন্টকে বলছি-দেশের বিচারব্যবস্থা কবে পরিবর্তন করবেন? কবে আসবে আপনাদের সংস্কার? যদি না করতে পারেন দায়িত্ব ছেড়ে দেন। কিছু মানুষ গিয়ে থানায় মব করবে, তাও এমন একজনের বিরুদ্ধে যে নিজের দোষ স্বীকার করেছে। তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। বাহ্ পুলিশ বাহ্। এ ঘটনা-এটাই প্রমাণ করে দেশে অপরাধ করে, ইভটিজিং করে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো যাবে। ভিকটিম স্টেপ নিলে উল্টো তাকে হয়রানি করা হবে।’
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতিদিন আন্দোলনে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘ফ্রন্ট লাইনার ছিলাম না। কিন্তু রেগুলার আন্দোলনে যাওয়া ছিল আমার রুটিন। কেন যেতাম আন্দোলনে জানেন? আমি বিসিএস দেব না, শুধু দাবিটা যৌক্তিক তাই যেতাম।’
তৌহিদী জনতার ওপর আক্ষেপ নিয়ে স্ট্যাটাসে ছাত্রী লেখেন, ‘যারা নিজেকে তৌহিদী জনতা বলে থাকেন, ৫ আগস্টের পর ধর্মীয় লেবাসে লোকজন বের হওয়ায় আমি খুশি হয়েছি। ভাবতাম যাক, সবাই ব্যক্তি স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। মানুষগুলোর ওপর গত ১৬ বছর ধরে জুলুম হয়েছে। আর দেখেন, আমি যখন আমার দেশীয় পোশাক পরে রাস্তায় হাঁটি তখন আপনারা আমার শরীরের সাইজ মাপেন।’
দেশ নিয়ে আর কোনো আশা নেই-উল্লেখ করে ছাত্রী লেখেন, ‘আমাদের আন্দোলন করা ভুল হয়েছে। এতগুলো মানুষ এমনিই মারা গেছে। পারবেন তাদের রক্তের ঋণ শোধ করতে? ভেবেছিলাম দেশে থাকব। বিদেশে যাব-উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে একদিন দেশের জন্য কিছু করব। কিন্তু বিশ্বাস করেন-এখন এ দেশ থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে গেলেই বাঁচি।
এদিকে ‘পর্দা’ নিয়ে ঢাবি শিক্ষার্থীকে হেনস্তাকারী মোস্তফা আসিফ অর্ণবকে জামিন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। চাকরিতে তাকে বহাল করলে ক্লাস বর্জনের হুঁশিয়ারি দিয়ে ঢাবির ২০টি বিভাগের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা বিবৃতি দিয়েছেন।
শুক্রবার অভিযুক্তের পক্ষে নানাভাবে মব সৃষ্টির মাধ্যমে মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। বিবৃতি দেওয়া বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে-আইন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, ম্যানেজমেন্ট, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি, অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট।
উল্লেখ্য, বুধবার ঢাবি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী বাইন্ডার অর্ণব ঢাবি ছাত্রীকে কুরুচিপূর্ণ কথা বলে হেনস্তা করেন। শিক্ষার্থীদের সহায়তায় তাকে শনাক্ত করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে গেলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। শাহবাগ থানায় তাকে সোপর্দ করা হলে মব সৃষ্টি করা হয়। পরে জামিনে অর্ণব ছাড়া পান।
Discussion about this post