সম্প্রতি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ছয় দেশের অনানুষ্ঠানিক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান সোয়ে উপস্থিত ছিলেন। এ বৈঠকে সীমান্তের ওপারে যে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সে বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান সোয়ের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘তাঁকে (থান সোয়ে) বলেছি, মিয়ানমার সীমান্তে তো তোমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। সীমান্ত তো রাষ্ট্রবহির্ভূত শক্তির (নন-স্টেট অ্যাক্টর) নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। রাষ্ট্র হিসেবে তো আমরা নন-স্টেট অ্যাক্টরের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি না। কাজেই তাদের দেখতে হবে, কোন পদ্ধতিতে সীমান্ত ও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
এ অবস্থায় গত দুই মাসে বাংলাদেশে নতুন করে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার ঘটনাটি মারাত্মক উদ্বেগ তৈরি করেছে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তাতে আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকটরূপে ধরা পড়েছে। তিনি বলেছেন, ‘প্রচুর দুর্নীতি আছে সীমান্তে। এটা সত্যি। এটা অস্বীকার করার কোনো অর্থ নেই। দুর্নীতির মাধ্যমে প্রচুর ঢুকে যাচ্ছে (রোহিঙ্গারা)। নৌকা নিয়ে ঢুকছে। তবে একটা সীমান্ত দিয়ে যে ঢুকছে, বিষয়টি এমন নয়। বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে, এটা আটকানো খুব কঠিন হচ্ছে। তবে আমি মনে করি না আরেকটি ঢল আসবে। যদিও অনেকে আশঙ্কা করছেন; এই আশঙ্কা আমাদেরও আছে।’
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আমাদের আগাম প্রস্তুতি ও সতর্কতা জরুরি। কিন্তু সেটা কীভাবে? রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কোনো কিছু পরোয়া করছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি যে ভবিষ্যতে আরও বিপজ্জনক হবে, সেটা বোঝা গেল পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কথায়। তিনি বলেছেন, ‘এখন বয়স্ক যেসব রোহিঙ্গা আছেন, তাঁরা হয়তো পরিস্থিতি মেনে নেবেন। তবে আগামী ৫ বছর পর যেসব রোহিঙ্গার বয়স ২০ বছর হবে, তাঁরা বেপরোয়া হয়ে উঠবেন।’
এ ক্ষেত্রে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে সন্দেহ নেই। একই সঙ্গে বিশ্বসম্প্রদায়কেও এগিয়ে আসতে হবে। জাতিসংঘ ও অন্য বহুপক্ষীয় ফোরামে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টিতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। মিয়ানমারের দুই বৃহৎ প্রতিবেশী চীন ও ভারতকে আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে, যাতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ন্যায়সংগত দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। আরাকান আর্মির মতো আরও অনেক বিদ্রোহী গ্রুপ মিয়ানমারে সশস্ত্র তৎপরতা চালাচ্ছে। কাউকে শক্তি–বলে নিবৃত্ত করতে চাইলে তারা ভুল করবে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে, সেটা কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না।
এস এম/
Discussion about this post