ইউরোপের দেশ গ্রিসে অবৈধ হয়ে পড়ায় দীর্ঘদিন নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছিলেন কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি। অবশেষে গ্রিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে দুই দেশের সমঝোতা চুক্তির বাস্তবায়নে এবার স্বস্তিতে আছেন তারা।
রেসিডেন্স পারমিট কার্ড পেয়ে অনেক প্রবাসীর মুখে এখন তৃপ্তির হাসি। কেউ কেউ দেশে গিয়েও ঘুরে আসছেন। অনেকে দেশে অবস্থান করছেন, সময় কাটাচ্ছেন পরিবারের সঙ্গে। পাশাপাশি বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ।
২০২২ সালের শুরুতে অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রতি অনমনীয় আচরণ শুরু করে গ্রিস সরকার। অবৈধদের আটক করতে চলে গ্রিক পুলিশের অভিযান। এ থেকে বাঁচতে গৃহবন্দি হয়ে পড়েন অনেক বাংলাদেশি, কমে যায় আয়-রোজগার। অনিয়মিত অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতেও তোড়জোর শুরু করে গ্রিক সরকার। কয়েক দফায় প্রায় অর্ধশতাধিক বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করে অভিবাসীদের মাঝে।
গ্রিসের পশ্চিম মানোলাদায় বাস করেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক। তারা মূলত গ্রিক কৃষিখামারের সঙ্গে জড়িত। স্ট্রবেরি, জয়তুন ও মাল্টাসহ কৃষির বিভিন্ন খামারেই তাদের কাজ। গ্রিস ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা এ অভিবাসীরাও বৈধ কাগজপত্র না থাকায় দুর্ভোগে পড়েন, অসুস্থ হলে পাচ্ছিলেন না চিকিৎসাসেবা। নানা আতঙ্ক, হতাশা আর দুঃখকষ্টে দিন কাটছিল তাদের।
এ অবস্থায় গ্রিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রচেষ্টায় ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফর করেন গ্রিক অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি। এসময় তার মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
অবশেষে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই বৈধতা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে গ্রিক সরকার। ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে চালু করা হয় আবেদন করার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। ধাপে ধাপে রেসিডেন্স পারমিট দেওয়া শুরু করে দেশটি। একসময় অনিয়মিত হয়ে পড়া বাংলাদেশিরা এখন বৈধভাবে দেশটিতে বসবাস করছেন।
এ বিষয়ে গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ জানান, এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৮৩৩ প্রবাসী প্রথম ধাপে দূতাবাসে নিবন্ধন করেছেন। এতে আগের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রায় ১.৫ গুণ বেড়েছে। প্রবাসীরা এখন বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠাচ্ছেন বাংলাদেশ।
রাষ্ট্রদূত বলেন, দূতাবাসের দুই বছরের কূটনৈতিক তৎপরতার ফলে বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যকার যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল সেটার প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখানে অনিয়মিতভাবে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশি যারা ছিলেন তাদের বৈধ হওয়ার একটা সুযোগ এসেছে। সমঝোতা স্মারকের বিভিন্ন পর্যায় পেরিয়ে এবং আইনের বিভিন্ন জটিলতা সব নিরসন হয়ে অবশেষে বৈধতার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এফএস/
Discussion about this post