নেশার টাকা জোগাড় করতে চার মাসের কন্যাসন্তানকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করেন বাবা মুরাদ মোল্লা। নিজের রক্ত বিক্রি করে সেই সন্তানকে ফিরিয়ে এনেছেন মা সাথী বেগম।
এমনই ঘটনা ঘটেছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বলাকইড় গ্রামের উত্তরপাড়ায়। সম্প্রতি সাথী বেগম নামের ওই নারীকে রাস্তা থেকে উদ্ধারের পর বিষয়টি জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা সাথী বেগম। তার মা দ্বিতীয় বিয়ে করার পর তার বাবাও দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সংসারে সৎমা থাকায় বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের শিকার হতেন সাথী। দুই বছর আগে বলাকইড়ের গ্রামের মুরাদ মোল্লার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মুরাদ মোল্লা একাধিক বিয়ে করেছেন এবং নেশায় আসক্ত ছিলেন। সাথী বেগমকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতেন তিনি। এ অবস্থায় বিয়ের এক বছরের মধ্যে তাদের ঘরে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান।
মেয়ের বয়স যখন চার মাস, তখন নেশার টাকা জোগাড় করতে বাবা মুরাদ মোল্লা তার মেয়েকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। সন্তানকে ফিরিয়ে আনার জন্য স্বামীর কাছে অনেক আকুতি জানান সাথী বেগম। কিন্তু লাভ হয়নি। সাথীকে তালাক দেন মুরাদ মোল্লা। এরপর সাথী বেগম বাবার কাছে ফিরে গেলে সৎমায়ের কারণে জায়গা হয়নি সেখানেও।
কোনো উপায় না পেয়ে রাস্তায় থাকতে শুরু করেন সাথী বেগম। আট মাসের মেয়েকে নিয়ে ঘুরে বেড়ান রাস্তায় রাস্তায়। মাসখানেক আগে সাথীর পায়ের ওপর দিয়ে রিকশার চাকা উঠে গেলে ভেঙে যায় পা। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় পা বাঁকা হয়ে গেছে।
বিষয়টি জানতে পেরে ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা তাকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন।
গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, সাথী বেগমের পায়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা নেওয়া জরুরি।
সাথী বেগম জানান, তার স্বামী নেশাগ্রস্ত ছিলেন। নেশার টাকা জোগাড় করতে না পরে তার চার মাসের সন্তানকে পাশের গ্রামে দুই হাজার বিক্রি করে দেন। পরে নিজের রক্ত বিক্রি করে সন্তানকে ফিরিয়ে আনেন সাথী বেগম। এখন তার একটাই চাওয়া—সমাজের বিত্তবানরা যেন তার পাশে দাঁড়ান।
সূত্রঃ জাগো নিউজ
এ ইউ/
Discussion about this post