জরাজীর্ণ দুটি নৌকায় সাগর পাড়ি দিয়ে ইন্দোনেশিয়া উপকূলে পৌঁছেছেন প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গা। রোববার (১০ ডিসেম্বর) ভোরে দেশটির আচেহ প্রদেশে নোঙর করেন তারা। স্থানীয় কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) তথ্যমতে, নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জন রোহিঙ্গা ইন্দোনেশিয়ায় গেছেন।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, প্রতি বছর নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে যখন সাগর শান্ত থাকে, তখন মিয়ানমারের নির্যাতিত সংখ্যালঘু মুসলিমরা কাঠের নৌকায় করে প্রতিবেশী থাইল্যান্ড এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
মিয়ানমারে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা প্রায়ই ঝুঁকি নিয়ে সাগর পেরিয়ে ইন্দোনেশিয়া বা মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেন। ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের আচেহ শহরের জেলে সম্প্রদায়ের নেতা মিফতাহ কাট আদে রয়টার্সকে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের সর্বশেষ দলটি দুটি নৌকায় চেপে রোববার ভোরে পিডি এবং আচেহ বেসার সৈকতে এসে পৌঁছায়। প্রতিটি নৌকায় আনুমানিক ২০০ রোহিঙ্গা ছিল বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সেনা কর্মকর্তা অ্যান্ডি সুশান্ত বলেছেন, ভোর ৪টার দিকে প্রায় ১৮০ জন রোহিঙ্গা পিডিতে নামে। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, দ্বিতীয় নৌকাটি সম্পর্কে সামরিক বাহিনী অবগত রয়েছে। তবে এটি কোথায় অবতরণ করেছে বা কতজন যাত্রী ছিল সে সম্পর্কে তথ্য নেই।
গত শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইডোডো এক বিবৃতিতে জানান, নৌকায় রোহিঙ্গাদের আগমন বৃদ্ধির সঙ্গে মানব পাচারের যোগ রয়েছে। সমস্যাটি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ইন্দোনেশিয়া জাতিসংঘের ১৯৫১ সালের শরণার্থী চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। তবে ইন্দোনেশিয়া উপকূলে শরণার্থীদের আগমন নতুন কিছু নয়।
নভেম্বর থেকে এপ্রিলে এশিয়ার এ অঞ্চলে সমুদ্র শান্ত থাকে। সাধারণত এ সময় মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা কাঠের নৌকায় চড়ে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার দিকে যাত্রা করেন। তবে এ গোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় অংশটি আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশে। এই সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি।
২০১৭ সালে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অভিযানের পর দেশটি থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। ওই অভিযানে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, হত্যা এবং হাজার হাজার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
Discussion about this post