দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়েও পরাজিত হয়েছেন অনেকে। পরাজিত এসব প্রার্থীর মধ্যে বর্তমানে মন্ত্রী পদে রয়েছেন এমন ব্যক্তিও রয়েছেন। এছাড়া অনেক পরিচিত মুখও নৌকার মাঝি হতে পারেননি। নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছেই হারতে হয়েছে তাদের।
সদ্য অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমান সরকারের ক্ষমতাসীন মন্ত্রী পদে থেকে নৌকার টিকিট পেয়ে ভোটের মাঠে নেমে হেরেছেন অন্তত তিনজন প্রার্থী। তারা হলেন- বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী দুই বারের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী দুই বারের সংসদ সদস্য এনামুর রহমান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী তিনবারের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য।
এছাড়া নৌকা নিয়ে হেরে যাওয়ার তালিকায় রয়েছেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু।
ঢাকা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সানজিদা খানমকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেন। আওলাদ হোসেন মোট ভোট পেয়েছেন ২৪ হাজার ৭৭৫টি। সানজিদা খানম নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ২২ হাজার ৫৭৭টি।
ঢাকা-৫ আসনে মশিউর রহমান মোল্লা সজল নৌকার প্রার্থী হারুনর রশীদকে পরাজিত করেছেন। হারুনর রশীদ (মুন্না) ৫০৩৩৪ ভোট পেয়েছেন।
বরগুনা-১ আসনে (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনে হেরে গেছেন টানা তিনবারের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তিনি নৌকা প্রতীকে ৫৪ হাজার ১৬৮ ভোট পেয়ে হয়েছেন তৃতীয়।
নেত্রকোণা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে নৌকার প্রার্থী অসীম কুমার উকিল হেরে গেছেন; তিনি পেয়েছেন ৭৪ হাজার ৫৫০ ভোট।
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে হেরেছেন নৌকার মৃণাল কান্তি দাশ; ভোট পেয়েছেন ৮২ হাজার ৮৩৩টি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পৌরসভা মেয়র মোহাম্মদ ফয়সাল স্বতন্ত্র হিসেবে কাঁচি প্রতীকে পেয়েছেন ৮৯ হাজার ৭০৫টি।
নরসিংদী-৩ আসনে নৌকা প্রতীকের ফজলে রাব্বি খান ৪৫ হাজার ১১৫ ভোট পেয়ে হেরে গেছেন। আওয়ামী লীগের আরেক নেতা সিরাজুল ইসলাম মোল্লা স্বতন্ত্র হিসেবে ভোট করে ঈগল প্রতীকে জয় পেয়েছেন।
যশোর-৬ আসনে নৌকা নিয়ে হেরেছেন শাহীন চাকলাদার, ভোট পেয়েছেন ৩৯ হাজার ২৬৯টি। জয়ী হয়েছেন ঈগল প্রতীকে আজিজুল ইসলাম, ভোট পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৪৭টি।
চট্টগ্রাম-১৬ আসনে শেষ বেলায় আচরণিবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থিতা হারালে নৌকার মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট বাতিল করা হয়। বাঁশখালীর এ আসনে জেলা আওয়ামী নেতা মুজিবুর রহমান ঈগল প্রতীকে ৫৭ হাজার ৪৯৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আরেক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির।
ফরিদপুর-৩ সদর আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শামীম হক ৭৫ হাজার ৮৯ ভোট পেয়ে হেরে যান। এখানে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ।
ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহ এবারও হেরে গেছেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬ ভোট।
এ আসনে আওয়ামী লীগের আরেক নেতা নিক্সন চৌধুরী ঈগল প্রতীকে তৃতীয়বারের মত জয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ ভোট।
হবিগঞ্জ ৪ আসনে নৌকার প্রার্থী বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী হেরে গেছেন। টানা দুইবারের এই সংসদ সদস্য পেয়েছেন মাহবুব আলী পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৫৪৩ ভোট।
তার প্রতিদ্বন্দ্বী ফেইসবুকের পরিচিত মুখ স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জয়ী হয়েছেন।
মাদারীপুর ৩ আসনে আওয়ামী লীগের আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) ৬১ হাজার ৯৭১ ভোট পেয়ে হেরে গেছেন।তার প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক আওয়ামী লীগ নেতা সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মোসা. তাহমিনা বেগম বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
ঢাকা-১৯ আসনে নৌকার প্রার্থী ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম।
রাজশাহী-২ আসনে নৌকা প্রতীকের ১৪ দলের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন।
কুষ্টিয়া-২ আসনে ১৪ দলীয় জোটের নেতা ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাজিত হয়েছেন। ইনু পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪৪৫ ভোট।
যশোর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী তিনবারের সংসদ সদস্য এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য হেরে গেছেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৭২ হাজার ৩৩২ ভোট।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন সংগ্রামকে হারিয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ এ. কে. একরামুজ্জামান।
মানিকগঞ্জ-২ আসনে নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন তিনবারের সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। ঘোষিত ফল অনুযায়ী মোট ১৯৩টি ভোটকেন্দ্রে টুলু পেয়েছেন ৮৮ হাজার ৩০৯ ভোট আর মমতাজ পেয়েছেন ৮২, হাজার ১৩৮ ভোট।
ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনে জুয়েল আরেং নৌকা প্রতীকে ৭৩ হাজার ৮৯২ ভোট পেয়ে হেরে গেছেন। তাকে হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল হক সায়েম। যিনি ট্রাক প্রতীকে ৯৩ হাজার ৫৩১ ভোট পেয়েছেন।
ময়মনসিংহ-৬ ফুলবাড়িয়া মোসলেম উদ্দিন নৌকা প্রতীকে ভোট করেও হেরেছেন, পেয়েছেন ৪২ হাজার ৫৫৮ ভোট।
এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মালেক সরকার ট্রাক প্রতীকে ৫২ হাজার ২৫৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন।
ময়মনসিংহ-৭ ত্রিশাল আসনে হেরেছেন আওয়ামী লীগের হাফেজ রুহুল আমিন মাদানি। তিনি নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৫০ হাজার ৫৩১ ভোট। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম আনিসুজ্জামান আনিছ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ট্রাক প্রতীকে তাকে হারিয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৭১ হাজার ৭৩৮ ভোট।
ময়মনসিংহ-১১ ভালুকা আসনে কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু নৌকা প্রতীকে ভোট করে হেরে গেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। তিনি পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৪২০ ভোট।
কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দ প্রথমবার নৌকায় ভোট করার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। তিনি পেয়েছেন ৬৮,৬৯২ ভোট।
এফএস/
Discussion about this post